arup raheearup rahee
  • about
  • initiatives
  • resources
  • Special Programs
    • অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা ( mentorship) কার্যক্রম
    • করণ।। Koron ।। সহজ জীবনধারা
    • জীবন জিজ্ঞাসা।। অরূপ রাহী’র সঙ্গে
  • about
  • initiatives
  • resources
  • Special Programs
    • অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা ( mentorship) কার্যক্রম
    • করণ।। Koron ।। সহজ জীবনধারা
    • জীবন জিজ্ঞাসা।। অরূপ রাহী’র সঙ্গে
February 13, 2021
‘লুঙ্গি কাহিনী’ বইয়ের অংশ বিশেষ
  • Posted By : admin/
  • 0 comments /
  • Under : writings

[ব্যক্তিগত ব্যাপার রাজনৈতিক ব্যাপার। জরুরী সত্য কথা। নিজের কোন ঘটনা সমাজে প্রকাশযোগ্য ও প্রয়োজনীয় আর কোনটা নয়-এটা একটা নির্বাচন। একটা সিদ্ধান্ত যেমন ধরা যাক,’ লুঙ্গি কাহিনী’র কথা। এই কাহিনী লিখা শুরু হয় শহিদুল আলম ও ব্রাত্য রাইসুর মধ্যে ই-মেইল বিনিময়ের সুত্রধরে। সেখানে প্রসঙ্গক্রমে এই লেখক ও তার লুঙ্গি পরা বিষয় হিসেবে আছে। সেইসূত্রে আমার কিছু বক্তব্য যুক্ত করে এই রচনা এই কথাবার্তা, যদি ধইরাও নেই যে আমাকে কেন্দ্র করে, তবু, সমাজে এই ঘটনা ঘটতেছে, আমি নিজেও একজন হিসাবে সমাজের এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করতেছি। আমি মনে করি, এই ঘটনা সমাজের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে পেশ করা দরকার, কারণ একটা গুরুতর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যুতে এই তর্ক। এখানে, এই পেশকার, ধরা যাক, তর্কে/অনুশীলনে ‘কামিলগার’ নন, তাতে ইস্যু এবং তর্কের তাৎপর্য কমে না। বরং বোঝাপড়া তৈরী করতে সাহায্য করে। তাই সংকলনে এই কাহিনীর ভুক্তি।

লুঙ্গি কাহিনী/ যাপন ও সম্পর্ক শাস্ত্রের একটা ভূমিকা ।। অরূপ রাহী
প্রকাশকালঃ ২০০৯।
প্রকাশকঃ খড়িমাটি।
প্রাপ্তিস্থানঃ সংহতি বইঘর, কনকর্ড এম্পরিয়াম, কাটাবন, ঢাকা। ]

প্রিয় ব্রাত্য,
সেদিন কথা বলে ভালো লাগলো। একটা জিনিস আপনাকে বলা হয় নাই। আমি আপনার পোশাকের ব্যাপারে বিশেষ করে আপনাকে শ্রদ্ধা করি। ধরে নিচ্ছি এটা আপনার রাজনৈতিক অব স্থান থেকেই এসেছে। সে তো আমাদেরসকল কাজের ক্ষেত্রেই সত্য। তবে কথার সাথে কাজের যেখানে এতো ফারাক থেকে যায়, সেখানে আপনার চলা ফেরার ক্ষেত্রে পরিস্কার অবস্থান রাখেন দেখে আমার খুব ভালো লাগে।
আপনাকে অভিনন্দন।

শহিদুল
……….
ডিয়ার শহিদুল
আমি তো এক বছর ধইরা অষ্ট্রেলিয়ায়। আমার ধারণা আপনি রাহীর সঙ্গে আমারে মিলায়া ফেলছেন। মানে লুঙ্গি পরা রাহী। আমি জানি না। জানায়েন।
এমনিতে আমি ভালো। কিন্তু পোশাক তো আমার রাজনৈতিক না। আর যদি আপনি আমারে রাহী বইলা ভুল করতেছেন তবে বলি রাহীর ওই লুঙ্গি পরা আমার আপত্তির কারণ পোষাক যদি নিশান হয়া দাড়ায় তা নিয়া…আগে নিশ্চিত হয়া লই,পরে কথা বাড়ামু।
ভালো থাকবেন।

রাইসু
……

রাইসু,
হ ভাই, আমি ভুলই করছি। এবং তর্ক করতে রাজি আছি। তবে যোগাযোগ তো হয়া গেলো। গোলামী পোশাক ছাড়া আমরা ভদ্র হইতে পারি না, এটা আমার জন্য খুব বিরক্তির ব্যাপার।তবে এইটা নিয়ে লম্বা আলাপে ঢুকতে চাই না। এর বাইরেও অনেক কাজ আছে। ভালো থাইকেন।
শহিদুল

আলাপের বাইরে আপনের অনেক কাজের খবর অবশ্য পাই। লম্বা আলাপে আমারও ইচ্ছা নাই। দুই লাইনে সারি। আমাগো ভদ্র হওয়া যে দরকার তাও সাহেবরা শিখায়া গেছে। ভদ্রতা আমদানী করা জিনিস, গোলামীর মতই। তাইতে ওইটা উনাগো পোশাকেই হইতে হবে, যেমন উনাগো আচারেই ভদ্রতার প্রকাশ। গ্রামের সব মানুষ বিপ −ব না করতে না করতেই লুঙ্গি পরতেছে। শহরের বিকল্প বুদ্ধিজীবী হইতে গেলে বিকল্প পোশাক তো একটা লাগবই। আর এনজিও-ওয়ালারা এই রকম রুরাল (অরগানিক) বুদ্ধিজীবী দেখলে অনেক খাতিরও করে। কি আর করা! আপনে লম্বা আলাপে ঢুকবেন না।

আপনারে সালাম জানাই। ভুলের কারণে যে আপনের কথা শোনা গেল তাতে আমার অনেক আনন্দ।

রাইসু

২.
সাল এর হিসেবে ২০০০-এ শুরু এই ঘটনার। আমরা তখন কয়েকজন বন্ধু মিলা লোকজ নামে একটা সংগঠন শুরু করছি। শ্যামলীতে একটা বাড়ীর পিছন দিকের অংশে, নীচতলায়, দুইরুমের একটা জায়গা ভাড়া কইরা আমরা সেই খানে কাজ করি, থাকি উন্নয়নের রাজনীতি আমাদের একটা গবেষণার বিষয়। ‘রাজনীতি’, ‘এনজিও’ থিকা নানারকম লোকজন আমাদের ওইখানে আসে-টাসে।

একরুমে আমরা থাকি-ঘুমাই, আরেক রুমে কাজ করি। মাঝখানে একটা ভাঙ্গাচুড়া দরজা। প্রতিদিন সকালে ‘ভিতরের’ রুমে গোসল খাওয়া-দাওয়া সাইরা ‘লুঙ্গি’ খুইলা ‘প্যান্ট’ পইরা ‘বাইরের রুমে’ আইসা ‘অফিস’ করি। আমার বন্ধুরাও দুএকজন তাই করে। প্রতিদিন এই ‘ঘর’ ‘বাহির’ করি। ‘অফিস’ এ ‘বাইরের’ লোকজন আসে, আমি লুঙ্গি খুইলা, প্যান্ট পইরা তাদের সঙ্গে সালাম-আদাব করি। কিন্তু, যেমন, ‘বাজার’ করতে যাই ‘লুঙ্গি’ পইরা। ‘বাজার’এও অনেক লোকের সাথে দেখা হয়। ‘লুঙ্গি’ পইরা সালাম আদাব করি, অসুবিধা হয় না। আমার একটু কেমন কেমন লাগে।

মানুষ লুঙ্গি পরলে একরকম, প্যান্ট পরলে আরেক রকম!… নিশ্চয় পোশাক ছাড়া আরেক রকম! তখন ঘরে থাকলে সেটা ঘরের ভিতরে আরেক দুনিয়া! বাইরে থাকলে আরেক সেইটারে বাইরের জগতে মিলায়া ফেলে ল লোকে তারে ‘পাগল’ বলে, ‘অপ্রকৃতিস্থ’, ‘অ-সংস্কৃত’, ‘আনকালচারড’ বা আরো কিছু বলে। আমি ভাবলাম, অতদুর না হয় নাই গেলাম লুঙ্গি-প্যান্ট-এর আইল ভাঙলে ‘বাইরের জগতে’ কি হয় একটু দেখি।

২.২
আমি লুঙ্গি পইরা সালাম আদাব করা শুরু করলাম। ‘অফিস’ এ বসা শুরু করলাম, বাইরে, অন্য ‘অফিসে’ যাওয়া শুরু করলাম লু ঙ্গি পইড়া। সাথে আছে লম্বা চুলের ঝুটি আর ওড়না আমারে দেইখা ‘শিক্ষিত ‘দের কেউ আড়ালে, কেই সামনে দিয়া মুচকি হাসে, কেউ বলে ‘বাউল’, কেই বলে ‘নগর বাউল’, বলে ‘কাদের সিদ্দিকীর দলে গেছেন নাকি’, কেউ বলে ‘আসল’, কেউ বলে ‘লোকজ’, কেউ বলে ‘ভং ধরছে’। ‘বামপন্থী’ কেউ বলে ‘অ্যানার্কিস্ট”, গ্রামের ‘সাধারণ’ নারী-পুরুষ অনেকেই বলে,’মেয়েদের মতো’। ‘শহরে’ তো বটেই। কেউ কয় ‘হাফ লেডিস’…। গরীব রিক্সাওয়ালা কিংবা ঢাকার লোকাল বাসের কন্ডাকটরের কাছে আমি কখনো ‘অ াপনি’, কখনো ‘তুমি’। কখনো কয় ..’লেডিস নামব’..কখনো ‘সাধু’ ফকির, কখনো অন্য কিছু। …এনারা দেখছি প্যান্ট-শার্ট পরা লোকজনরে ভাই এবং আপনি সম্বোধন করেন।…. পুলিশ যে কতবার ধরছে, চেক/সার্চ করছে তার ইয়ত্তা নাই। তাদের ‘সন্দেহ’ হয়। দেইখ্যা ‘ভদ্রলোক’ মনে হয় না। (থ্রি-কোর্য়টার পড়লে খালি ভদ্রলোক মনে হয় তাই না, এলিট-এলিট একটা ভাব আসে! আহা, একদিন থ্রি কোয়ার্টারও পুরান/ক্ষ্যাত হয়া যাবে! আসবে নতুন কিছু! এলিট /স্মার্ট ভাবের নতুন কিছু!) ‘জঙ্গি’ (দাড়ি-চুল আছে, ফতুয়া, সাদা ওড়না/গামছা আছে,), ‘গাঁজাখোর’, এমন কি ‘বেশ্যার দালাল’ও মনে হয় হয়ত!
মাল্টিকাল্টি জাতিসংঘের বা তার শাখা-প্রশাখ ার কোনো মিটিং-এ সমস্যা হয় নাই।আর্ন্তজাতিক কোনো বেসরকারী মিটিং-এ তো নয়ই। কোনো কোনো তারকা হোটেল বা ব্র্যান্ড খাবার দোকানেও না। কিন্তু বাংলাদেশে শেরাটন, সোনারগাঁও, লা ভিঞ্চি, আমেরিকান ক্লাব, বসুন্ধরা শপিং মল, স্টার সিনেপ্লেক্স, কুপারস (খাবারের দোকান).., আরো কোন কোন ক্লাব ..এইসব (‘প্রথম শ্রেণী’র নাগরিকদের) জায়গায, লুঙ্গি নিয়া ঝামেলা হইছে। ওই সব জায়গায় ‘লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তির প্রবেশ নিষেধ’। আমি তাদের ‘পোশাক বিধি’ নিয়া জানতে চাইছি। অনেক জায়গায় আমার সঙ্গী বন্ধুরা আমার ‘পরিচয়’ দেয়ার পর সেখানকার কর্তারা আমাকে ‘যাচাই-বাছাই’পূর্বক প্রবেশাধিকার দিছেন। আমি যে ‘আর্টিষ্ট’, ‘কবি’, ‘গায়ক’!….অনেক জায়গায় তাও ঢুকতে দেয় নাই। যদিও ঐসব জায়গায় ফরমাল পোশাকের বাধ্যবাধকতা আইন বা বিধিবিধান আকারে নাই। প্রথা। শাসকের প্রথা। অন্যরা অনুসরন-অনুকরন-পালন করতেছে মাত্র। আমি ছোটোলোক চাষা/রিক্সাওয়ালা কিংবা ভিক্ষাজীবী তো হইতে পারি! ছোটোলোকরা এইরকম দামী জায়গায় ঢুকলে ‘বড়লোকদের দোকানের অপমান!

অনেকে ‘চুপ’ থাকে। কিছু বলে না। অনেকে আড়ালে মন্তব্য করে। সামনে করে দু একজন। আমি তখন যেখানে যেরকম বইলা সারি। অনেক অফিসে যাইতে নিরাপত্তাকর্মী আটকায়। অনেক অফিসের ‘প্যান্ট পরা বড় বস’ আমারে ‘দেখতে পারে না’।… ‘বিদেশ’ও মিটিং-সিটিং এ যাই লুঙ্গি পইরা। চাই বা না চাই, এই ‘এক্সোটিক’পোশাকের কারণে ‘একস্ট্রা’ ‘খাতির’ কইরা কেউ নগদ নারায়ন সাধে নাই। মিটিং-সেমিনার-সম্মেলনে যারা আসে টাসে তারা পোশাকের এই ‘লুঙ্গি’ ঘটনায় বেশির ভাগই নির্বিকার। আমার ধারণাও ছিল সেইটা অনেকে এইরকম ‘অর্গানিক’,’লোকাল’, ‘রুরাল’, ‘ইন্ডিজেনাস’, ‘স্পেশাল’ মাল অনেক দেখছে। অনেকে দেখলেও খেয়াল করে না। অনেকের দেখার দরকার বা ইচ্ছা নাই। সুবিধা নিতে চাইলে তার লাইন আলাদা। ফল হয় কি-না আমি জানি না।

৩.
আমি, সাধারণ বিচারে একজন ‘ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত’, ‘সমতলের বাঙালি’ ‘পুরুষ’ হিসেবে পাবলিক-প্রাইভেট/ঘর-বাহির-এর যে অভিজ্ঞতা লুঙ্গি কাহিনী মারফত পাইলাম, আমি নিশ্চিত ‘নারী’ বা অন্য পরিচয়ের কারো ক্ষেত্রে তা অন্যরকম। সমাজে পুরুষের পাবলিক জগত এক রকম, না রীর আরেক। সাধারণভাবে পুঁজিবাদ পাবলিক-প্রাইভেট ভেদ দিয়া কাম সারে। নারীর বেলায়ও তার প্রমাণ পাওয়া যাইব। কিন্তু সমাজে নারীত্ব ও পৌরুষের সংজ্ঞাও তো নির্মিত ও পরিবর্তনশীল। ফলে বিশেষ অবস্থার বিশেষ অভিজ্ঞতা হবার কথা।….

আমরা নানা কাজেকর্মে ও চিন্তায় ‘আধুনিকতা’ শিক্ষা’, ‘ভদ্রতা’…এই সব নিয়া প্রশ্ন তুলি অনেকেই এই প্রশ্ন আজকাল করেন। বলি যে ‘কোক’-‘পেপসি’, মাইস্পেস, হাই-ফাইভ, ডিজুস, থ্রি-কোয়ার্টার, বিলিয়ার্ড, পুল, মাংসপেশি, নাভি, টাটু,…ঝুটি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, হাফ-পাতি-ফুল-লিবারেল ‘ফ্রেন্ডশীপ’ এবং ‘প্রেম’ দিয়া কি আমরা ‘স্মার্টনেস’ বুঝব? বলি যে আমরা যা করি, যা পরি, যা খাই, যা ভাবি, যা বলি, যা গোপন করি, যা প্রকাশ করি, যা প্রকাশ্য গোপন করি, যা গতরে রাখি, যা মনে রাখি, যা চাই কিন্তু পারিনা,…সব দিয়াই আমি/আমরা আমাকে/আমাদেরকে বুঝবো। সবই অবস্থা, থাকা, না থাকা, ইচ্ছা, অনিচ্ছা,আকাঙ্ক্ষা…ইত্যাদির প্রকাশক। যে শর্টস পরে, থ্রি- কোয়ার্টার পরে, নাইকির জুতা গেঞ্জি পরে, কিংবা নাম না জানা কোম্পানির মালপত্র পরে, তারও পোশাকের সামাজিক নাম-নিশানা আছে। একে অন্যের চিহ্নায়ক। সমাজের, প্রতীক ব্যবস্থার অংশ। ভাষা। আমি আপ্নি চাই-না চাই, জানি-না-জানি। নিশান না থাকারও নিশান আছে। সকলেই নিশান উড়ায়া চলতেছে। না টের পাইলেও উড়তেছে ঠিকই। কি নিশান, কেন নিশান, কিসের নিশান-সেইটা বড় বিষয়। এই প্রতীকায়ন চলতে থাকে। চিহ্ন বদলায়। নির্ভর করে কারা ক্ষমতায়। উৎপাদন পদ্ধতির, অর্থনীতির ধরন, সংস্কৃতির ধরন। ফরমাল পোশাক ফরমাল ক্ষমতা। তারা চাইলে ইনফরমাল পোশাক ফরমাল অনুষ্ঠানেও পরতে পারেন। সমস্যা নাই এই ক্ষমতায় স্বীকৃতরাও চাইলে পারেন। শাসক শ্রেনীর সংস্কৃতির দাপট, আবশ্যক শৃংখলা বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি দালালী বা মোসাহেবী, লুম্পেন, হীনমন্যতার সংস্কৃতি।

নিখাদ, নিরপেক্ষ, কেবলমাত্র ‘ফ্যাশন’ বইলা কিছু নাই। পিওর স্টাইল কিছু নাই। দেখতে ‘সুন্দর’/’মজার’/’দারুণ’/’নতুন’/ ‘সাধারণ’ একটা কিছু পিনলেই/নিলেই/খাইলেই হইল এত নিরীহ এবং সরল? নির্বিকার ‘সরলতা’ অন্যায় সন্ত্রাসের পক্ষে যায়। ‘নিরপেক্ষতা’ও। ‘হাজার বছর’ ধইরা লুঙ্গি পরা হইল ‘হাজার বছর’ ধইরা তার নিজের নির্মান-আবিষ্কার-বিনির্মান প্রকাশ-গোপন-ভাব-অভাব। খেয়াল-খুশি মাত্র না। শীত-গরম শুধু না। স্বীকৃতি আদায় বা নিজের অস্তিত্ব জাহির মাত্র না। আসনা-বাসনা পূরণ মাত্র না। এক বা একাধিক, নানা মাত্রায়। এর ইতিহাস-ডিসকোর্স-কুরসিনামা-রাজনীতি-অর্থনীতি আছে। ‘আমি’র শুধু টেকনোলজি না, প্রত্নতত্বও আছে। তা কেবল অতীতের না। বর্তমানের। ভবিষ্যতের।

উপনিবেশ, তার ‘ভদ্রতা’, পুঁজিতন্ত্র, তার ‘উদারতা’, ব্যক্তিমালিকানা ও তার সংস্কৃতির দাপট, পুরুষতন্ত্র, দমনতন্ত্র-এসবের কারণে আপাত নিশানবিহীনতা, প্রতীকবিহীনতা ঘটে প্রতিরোধে নতুন নিশান/প্রতীক/চিহ্ন দরকার হয়। প্রতিরোধ নতুন নিশান/প্রতীক রূপলাভ করে। প্রতিরোধ নতুন প্রতীক তৈরী করে। হায়ারারকি কবে থাকবে না, আমি দিন-তারিখ দিতে পারব না। তার আগ পর্যন্ত তাই নিশানের চর্চা জনগণতান্ত্রিক বিপ−বের অন্যতম করণীয়। এইখানে বইলা রাখি, ‘গণতন্ত্র’ বইলা আমরা যে জিনিস সমাজে/জগতে দেখি, শুনি, তা সমাজ-শাসনের পদ্ধতি হিসাবে, আদর্শ হিসেবে, সংস্কৃতি হিসেবে চইলা আসতেছে। এর নানা রকমফের-তরিকা আছে। যেমন পশ্চিমা ধাঁচের ‘গণতন্ত্র’। এর বয়স পুঁজিবাদের সমান। মৃত্যুও পুঁজিতন্ত্রের সাথেই। বিকশিত/উদার পুঁজিবাদ প্রাইভেট খায়েশের/ইচ্ছার/অনুভূতির/মূল্যবোধের পাবলিক ভোগ ততখানিই অনুমোদন করে, যতক্ষণ তা উদারনৈতিকতার ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ না করে। এর ব্যাত্যয় ঘটলে সে, যেমন, ‘হিজাব’বিরোধী আইন করতে পিছপা হয় না। পুঁজিবাদ তা র জ্বালানী সংগ্রহ করে নিজ ও পররাষ্ট্র জনগণকে শোষণ করে। আমরা যারা পুঁজিতন্ত্রের ফাঁপড় ও দাবড়ানি চাই না, তারা সমাজ-ব্যবস্থা চালাইতে একটা অংশগ্রহণমূলক, অর্ন্তভূক্তিমূলক, সংহতি ও সহযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা, ব্যক্তিমালিকানার দাপটহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চাই গণতন্ত্রের নামে যদি ব্যক্তি ও সিন্ডিকেট শাসন চলে, তবে তার বিনাশ করার মাধ্যমে সেটার সম্ভাবনা তৈরী হয়। তার বহু নাম হইতে পারে। যেমন, জনগণতন্ত্র। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশে এখনও প্রতিষ্ঠা পায় নাই।

যেই সব নীতি, চর্চা, প্রতিষ্ঠান, আদর্শ আমি মানি না, তার চিহ্ন আমি স্বেচ্ছায় বহন করব না জোর করলে তা প্রতিরোধ করব। সেই ব্যবস্থার চর্চা আমি করব না। ‘নিজের’টা, ‘নিজে’র মত করব, যতখানি, যেভাবে পারি। যে বা যারা জনগণতান্ত্রিক বিপ −ব চায়, সে বা তারা এইটা করবে। এর নাম জীবনধারা, জীবনচর্চা। লাইফস্টাইল। খাওয়া, পড়া, বসত-বাড়ি, প্রেম-ভালবাসা, সমাজ-সংগঠন…সব। অধিপতি শ্রেণী/মতাদর্শ ও তার পোষ্যরা যেখান থেকে যে লাইফস্টাইল নিক না কেন, নিজে যেটাই ভোগ করুক না কেন, সে চায় অন্যপক্ষকে কোনো এক বা একাধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। শাসন করতে। পণ্যপুঁজিবাদ নাম নিশানা-চিহ্ন-প্রতীক দিয়াই তো পাবলিকরে খাওয়াইয়া পরায়া কাম সারতেছে। বাসনা যন্ত্র, পুঁজি ও মুনাফা যন্ত্র চালু রাখতেছে। রাষ্ট্র, আধিপত্যমূলক সমাজ-শাসন এবং ‘বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল’ নিজের সুবিধামতো লাইফস্টাইল চায়, মানুষকে সে অনুযায়ী চলতে বাধ্য করার চেষ্টা করে, নানা কায়দায় তাকে ‘উপভোগ্য’, ‘লোভনীয়’ করে তুলতে কসুর করে না লাইফস্টাইল তাই রাজনীতি। লাইফস্টাইল যার যা তার সেই রাজনীতি। যিনি যে লাইফস্টাইলের পক্ষে, তার সেই রাজনীতি।

আমি যদি পুঁজিতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র, নির্বিকার ভোগবাদ, নিপীড়ক ক্ষমতাকাঠামো-এইসব জিনিস না চাই, আমি যদি ‘উপনিবেশ’, ‘আধুনিকতা’র কোনো আছর নিজের মাথা এবং সমাজ থিকা ফেইলা দিতে চাই, তবে আমি ঘর-গেরস্থালী, সমাজ-জামাত-পাবলিক জগত, সম্ভব সব রকম ‘ফ্রন্টে’ তার বিরূদ্ধে লড়ব। শরীর সেই লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট এটা গোপন-প্রকাশের ধারণা পাল্টায়া দেয়। সদর-অন্দর পাল্টায়া দেয়। ক্ষমতার বিন্যাস পাল্টায়া দেয়। কাজটা হইতে পারে সমালোচনা, পর্যালোচনা ও বিশে−ষণ, বিদ্রূপ ও উন্মোচন, সম্মুখসমর, মাথা-শরীর ও সমাজে স্বাধীন অঞ্চল/মুক্তাঞ্চল গঠন, এর পরিধি বাড়ানো। কিভাবে, কখন, কোন মাত্রায়-সেটা বিবেচনা। কোনটা কাজ না? যারা, ধরা যাক, ‘ভবিষ্যত’, ‘মুক্তি’ ইত্যাদিতে আস্থা রাখেন না, বর্তমানে, নগ দে চান, তাদের জন্য তো এই লড়াই আরো জরুরী!

চিন্তা এবং চিন্তার পদ্ধতি না বদলায়া শুধু পোশাক বদলায়া লাভ নাই। আবার চিন্তা বদলায় বইলাই পোশাক বদলায়। পোশাক বদলায় বইলা চিন্তা বদলায় না। বড়লোক তার সুবিধা ও সংকট থিকা যা খায়-পড়ে তা অ-বড়লোকের জন্য ফ্যাশন। বড়লোকের সেট করা ফ্যাশন উচ্চ মধ্যবিত্ত অনুকরণ করে। মধ্যবিত্তও চেষ্টা করে। এইটা কোন পরিবর্তন না।

লুঙ্গি-শাড়ী-স্যুট-সাফারি জাতীয়তাবাদের আলু-মুলা না। জাতীয়তাবাদ নিজেরটা পাওয়া হয়া গেলে অন্যের ওপর আগ্রাসন চালাবে না তার গ্যারান্টি নাই। লাইফস্টাইল জনগণতন্ত্রায়নের সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা, স্বায়ত্বশাসন ও সংহতির সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতা, স্বায়ত্বশাসন ও সংহতির জন্য চাই লাইফস্টাইলের জনগণতন্ত্রায়ন। ‘জাতীয়তাবাদী’, ‘দেশপ্রেমিক’, ‘জনগণের পক্ষের’ দাবীদার যে কারো মৌলিক করণীয়ের মধ্যে পরে জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল ও সমাজ সংগঠন ও ব্যবস্থাকে সমর্থন করা। না পারা টা তাদের স্ববিরোধের প্রকাশ।

Eida gelo ek dik. Poshaker aro sthan-kal-patro bhed thakbe(jemon thandar deshe gele ami ki korbo?). Kintu tar che boro kotha amar pratyahik jibon o shomaj. Poshaker protibesh-rajnitir (political ecology) dik ase. sei alochonao dorkar…

…shobar jonno lungi pora joruri na. abosshok o na. amio je sharajibon, shobshomoy lungi porbo-emon protigya kori nai. karon, bishoyta lora i korar. Onushiloner maddhome tar protik o koushal nirdharoner. jara amar ei `cultural monopoly’ bhangte chan, tara swagoto!

প্রশ্ন হয় : লাইফ-স্টাইল কতদুর যায়? পুঁজিবাদ তো ‘বিপ্লবী’ লাইফস্টাইলকে পণ্য বানাবে আর সমাজের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন তো টি-শার্ট পড়ার মত ‘সহজ’ কর্ম নয়। উত্তর : পুঁজিবাদ ‘বিপ্লবী’ লাইফস্টাইল পুরোটা নিতেও পারে না। চায় ও না। আর ‘বিপ−বী’ লাইফস্টাইল কোনো খাপে মোড়া জিনিস না। লাইফ-স্টাইল/জীবনধারা শুধু লুঙ্গি-শাড়ী চুড়ির মামলা না। এইটা জীবন-সমাজ-জগত সম্পর্কে ভাবনা ও অনুশীলনের মামলা। এতে তাই বিপ −বী সৃজনশীলতা, সতর্কতা ও কৌশলের ব্যাপার আছে। ‘বিপ−ব’ টিশার্ট ফতুয়া পড়ার মত সহজ কর্ম না। ঠিকই তো।

জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল ‘উদার/ বুর্জুয়া ‘ পরিবেশে আরামছে করার কোনো ব্যাপার না। এটা একটা লড়াই। এটা মুক্তবাসনার অনুশীলন। কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক বাসনা পূরণ না সমাজের স্ববিরোধের প্রকাশ শুধু না। জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল বুর্জোয়া ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ না। জনগণতান্ত্রিক আচার-অনুশীলন। ‘ব্যক্তি’-‘ব্যক্তি’, ব্যক্তি-সমাজ, ব্যক্তি-সংগঠন, ব্যক্তি-উপায় /উপকরণের এমন সম্পর্ক, উৎপাদন, বন্টন ও ভোগের এমন ধরন চর্চা (লাইফ-স্টাইল), যা ঘরে-বাইরে, সমাজে অ-ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সম্ভব করে তোলে। যা ব্যক্তি ও সমষ্টির সুরক্ষা ও বিকাশ নিশ্চিত করে। এর জন্য দরকার একটা পারষ্পারিক বোঝাপড়ার মধ্যদিয়ে চর্চিত সামষ্টিক প্রক্রিয়া ও উদ্যোগ।

কিন্তু কর্তা কে? যে বা যারা সিদ্ধান্ত নিয়া একটা কাজ করে; ঘটনায় তার অংশগ্রহণ এমন যে তা ঘর-বাহিরের সীমানায় ধাক্কা দেয়। নাড়ায়ে দেয়। সরায়া ফালায়। ভাইঙ্গা দেয়। কায়েমি স্বার্থের আরাম হারাম করে। ঘটনা এবং অবস্থা ও ব্যবস্থার নতুন বিধি-বিধান তৈরী করে। তখন রাজনীতি বদলায়। প্রেম বদলায়। বিজ্ঞান বদলায়। শিল্প বদলায়। সংস্কৃতি বদলায়। সমাজ বদলায়। এ সবের মধ্য দিয়া সত্য প্রকাশিত হইতে থাকেন। এই পথ, এই প্রক্রিয়া, এই যাপন, এই সম্পর্ক বিকাশ কোনো পুতুপুতু চর্চা নয়। বিপ্লবী ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাজ ও সংস্কৃতির, ইতিহাস ও বর্তমানের রক্তক্ষরনেই তা সম্ভব হয়।

৪.
রঙের পরলাম। ‘নিরঙ্গা’ও পরলাম। পার দে ওয়া, পার ছাড়া, নকশা করা…নানা রকম। লুঙ্গির সাথে ওড়না, ফতুয়া, এইসব নিয়াও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমি করছি। কিন্তু মামলাটা আমার কাছে শুধু তিনটুকরা কাপড়ের না। এবং আমি শুধু তিনটা কাপড় পড়ি নাই। পায়ে আলতা-নুপুর শুধু পরি নাই। কপালে ফোঁটা শুধু পড়ি নাই। চুলের খোঁপা আর বেনী শুধু বান্ধি নাই। কানে ফুল শুধু পড়ি নাই।’দৈনন্দিন’, ‘সামাজিক’, ‘রাজনৈতিক’, ‘সাংস্কৃতিক’ কাজকর্ম করছি। এই সবের ভিতর দিয়া, মোটা-দাগে আমাদের সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী, লিঙ্গ ও পেশায় নানারকম যোগাযোগে ও মিশামিশিতে ‘নিজ ‘ এবং ‘অন্যে’র ঘর-বাহির, পাবলিক-প্রাইভেট চর্চা, সৌন্দর্য-চেতনার দশা কিংবা চালশা, লিঙ্গচেতনা, নারী-পুরূষ চেতনা, বন্ধুত্ব,প্রেম,যৌনতা,খাওয়া-পরা, সমাজ-সংস্থার আশা-আকাঙ্খা বোঝার চেষ্টা করছি। অনেকে আরো অন্যকোনো ভাবে করেন।…

দেখলাম- আমরা, ‘সবচে’ ‘বিপ্লবী আকাঙ্খাসম্পন্ন’ কর্র্মীরাও যেন ‘বিপ্লবের’ ভয়ে ভীত। এই ভয় আরেক ‘নিজ’ কে দেখার ভয়। ‘মুক্তির’, ‘আনন্দের’ ‘স্বাধীনতার’ ‘নতুনে’র, ‘আজব কিছু’র স্বাদ-অভিজ্ঞতা কে ভয়। তাই আমরা অনেকে শ্রেনীসম্পর্ক-নারী-পুরূষ-সৌন্দর্য যৌনতা -প্রেম-বন্ধুত্ব ইত্যদি প্রশ্নে দারূন রক্ষনশীল, কায়েমীস্বার্থবাদী (প্রতিক্রিয়া শীল, কার্যত বর্নাশ্রমপন্থী, ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট আরশীয় অবজেকটিভ দৃষ্টিভঙ্গীওয়ালা’দের কথা না হয় নাই বললাম)। ‘বিপ্লব’কে, ‘মৌলিক পরিবর্তন”কে তাই অনেকে ভবিষ্যতের ঘটনা হিসেবে রাখতে চাই, ‘ঐতিহাসিক’ঘটনা হিসেবে চাই, প্রক্রিয়া হিসেবে চাই না। বর্তমানের যাপন হিসেবে চাই না। যেটুক চাই অনেকে, তা অনেক ক্ষেত্রে নগদার্থনীতি সম্ভব হয়ে ওঠে বলে। ফলে ‘বিপ্লব’ ‘অসম্ভব’ “অধরা” থেকে যায়। অথবা ‘ঐতিহাসিক’ কিছু একটা হওয়ার পর কেউ কেউ বলে ওঠে ‘এইটাই বিপ্লব’, এইটাই অমুকতন্ত্র! এবং তার নামে শুরু হয় অমুকবাদ (ফ্যাসিবাদ) জিন্দাবাদ!…কিন্তু বিপ্লব হইল বিপ্লবী সমাজ জীবনের অনুশীলন। অনুমান না। বর্তমান সাধনা। পরিবর্তনের অনুশীলনে: পাবি রে অমূল্য নিধি বর্তমানে। অগ্রাধিকার থাকতে পারে। কিন্তু কোনটা বাদ দিয়া না।

“অধর” যদি বিপ্লব, তবে তাকে অধর দিয়ে ধরো। জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল আর জনগণতান্ত্রিক সমাজ/সংগঠন সেই অধর ধরার অধর ফাঁদ। অধর, কারন আগে থেকে তৈরী থাকে না। প্রতিনিয়ত লড়াই/অনুশীলনের মাধ্যমে একে চিনে নিতে হয়, সৃষ্টি করতে হয়। ফাঁদ পাততে জানলে তিনি আনন্দ হয়ে ধরা দেন।

আলেক সাঁই।।


অরূপ রাহী । । ২০০৭


January 17, 2021
‘পঞ্চাশে পা, কেমন আছে বাংলাদেশ?’
  • Posted By : admin/
  • 0 comments /
  • Under : Audio-Visuals , Interviews

https://eisamay.indiatimes.com/eisamaygold/people/50th-independence-day-of-bangladesh/podcast/79741507.cms


January 17, 2021
বাংলা গানের নান্দনিকতার যে শাসন ব্যবস্থা আছে- গভর্ন্যান্স অফ ইসেথিটকস- সেটা আমাদের গানে ভেঙে দেয়া হয়েছে
  • Posted By : admin/
  • 0 comments /
  • Under : writings

যায়যায়দিন ,ডিসেম্বর ২০০৯

অরূপ রাহী, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে তৎপর এক তরুন শিল্পী। মানুষের সামনে নয়া জীবন আর সমাজের বয়ান হাজির করতে তিনি সংস্কৃতির নানা মাধ্যমে ভর করেন। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক তো বটেই, কবি-গীতিকার-গায়ক ইত্যাদি পরিচয়ও তার জন্য যথার্থ। আন্ত্মর্জাতিক পরিমন্ডলেও কাজ করেন। তবে বাংলাদেশের বাংলা গানের শ্রোতাদের এক বিশাল অংশের কাছে এখন তার সবচেয়ে বড় পরিচয় গায়ক হিসেবে। রাহীরা গান করেন আন্দোলন-সংগ্রামের প্রয়োজনেই। সহযোদ্ধারা মিলে গড়েছেন গানের দল ‘লীলা’। রাজপথে-মঞ্চে-ঘরোয়া বৈঠকে-টিভিতে গানে গানে নয়া জীবন আর সমাজের গান করেন। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর লীলার প্রথম অ্যালবাম ‘নায়ক’ বাজারে এসেছে এ বছরের জুলাই মাসে। এর আগে ২০০৭-এ এসেছিল লিপি সরকারের সঙ্গে তার একটি দ্বৈত অ্যালবাম, ‘ভাব বৈঠকি’। সম্প্রতি যায়যায়দিন অফিসে এসেছিলেন নায়কের এ গায়ক। সাক্ষাতকার গ্রহণে মোহাম্মদ আরজু ।

এখন কি কোনো অ্যালবামের কাজ করছেন?

রাহী- এখন কাজ করছি লালন সাঁইজির গান নিয়ে। একদমই আখড়া ঘরানার গান।

কবে নাগাদ আসতে পারে?

রাহী- আমার টার্গেট জানুয়ারি। তবে যারা ডিস্ট্রিবিউট করে তাদের আবার লটের ব্যাপার আছে, তাদের ওপর নির্ভর করবে আসলে। তবে পহেলা বৈশাখের মধ্যে বেরিয়ে যাবে।

এবারো কি জি সিরিজ?

রাহী-এটা এখনো জানি না।

রাহী-প্রযোজক কি বাহিরানা?

না। এটা আমি নিজেই করছি।

বাহিরানার সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক কি?

বাহিরানা আমাদের, মানে লীলার প্রথম অ্যালবামের, নায়কের প্রযোজক।

আপনারা বলেন লীলা উন্মুক্ত গানের দল। তো প্রথম আপনারা নায়ক করলেন, এখন সাঁইজির গান নিয়ে আরেকটা অ্যালবামের কাজ করছেন। আপনাদের একেকটা গান তৈরি হয় কীভাবে?

রাহী-লালনের অ্যালবামটি কিন্তু লীলার না। লীলার অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে ওখানে কাজ করছে। কিন্তু ওটা আমার একক অ্যালবাম, আমার প্রযোজনা। তবে গানের দল হিসেবে লীলার গানগুলোর ক্ষেত্রে যেটা হয়; যেমন নায়ক অ্যালবামের কথাই বলি- একেকটা গান একেক সময় একেক কারণে লেখা হয়েছে। লীলার গান মূলত আমিই লিখি।

মানে একটা অ্যালবাম করবেন বলে লেখা হয়নি। পরে একটা অ্যালবামে এসেছে।

রাহী-হ্যাঁ। যেমন ইয়াসমীনের গানটা। দিনাজপুরের নির্যাতিত ইয়াসমীনকে নিয়ে লেখা। এসবই আন্দোলনের সময়, আন্দোলনকে মাঝখানে রেখে লেখা গান। সবগুলো। পরে এগুলো অ্যালবামে এসেছে। তারপর যেমন ‘আমি তোমার মাঝে’ গানটা, ‘৯৫ সালে লেখা। তখন কোনো পরিকল্পনাই ছিল না যে আমি গান করবো। মানে প্রফেশনালী গান করবো। ‘৯৫-এর আগে লেখা গানও আছে। নায়কের কথা বলছি এ কারণে যে ওটা অ্যালবামে এসেছে। আমাদের যেটা হচ্ছে, এখন একটা অ্যালবাম করবো। আসেন দশটা গান বানাই- এভাবে আমরা গান করি না। আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, প্রশ্ন, আন্দোলন সংগ্রামের অভিজ্ঞতা- এসব বিষয়কে ধারণ করার তাগিদ থেকে যেসব গান লেখা হয় সেখান থেকে আমরা পরে নির্বাচন করেছি কোনগুলো অ্যালবামে যাবে।

যন্ত্রসঙ্গীতের পর্বটা কীভাবে হয়?

–যখন দল ছিল না, তখন আমি চোঙা-মাইকে গাইতাম- রাস্ত্মার পাশে, মোড়ে, মঞ্চে। এভাবে এখনো গাই। ২০০৫-এর দিকে গানের দল হিসেবে যাত্রা করলো। কারণ আমরা উপলব্ধি করেছিলাম গান একই সঙ্গে একক ও দলীয় চর্চার বিষয়। যেমন যন্ত্রসঙ্গীতের প্রশ্ন যখন আসে তখন এটা তো আর একা সম্ভব না। আবার একই সঙ্গে এই যে কথা বলছি আমরা গানে, সেটা যদি একটা দলের চেতনা থেকে ধারণ করি, তাহলে পরে দল ও সমাজের ওপর সেটার একটা প্রভাব পড়ে।

অ্যালবাম বা আপনাদের আন্দোলন-সংগ্রামের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজন করা হলে সেখানে কি আপনারা গান করেন?

সাধারণত আমরা এমন আয়োজনে যাই না। বিশেষ কোনো কারণ থাকলে হয়তো। ধরা যাক, হয়তো আপনি বললেন যে আমরা লালনের গান শুনবো, কথা বলবো, বুঝবো। তখন তো যাই।

টিভিতে …

রাহী-হ্যাঁ। টিভি তো যাই।

কিন্তু আপনার তো টিভি নাই।

রাহী-আমার টিভি নাই। হে হে হে …।

তাহলে আপনাদের প্রোগ্রাম আপনি দেখেন না?

রাহী-পরে কখনো দেখি, কখনো দেখি না। কোথায় হয়তো কাছে বন্ধুর বাসা ইত্যাদি থাকলে দেখে ফেলি।

গত অ্যালবামের গান তৈরি করার সময় সম্ভাব্য শ্রোতা হিসেবে কাদের কথা খেয়ালে এসেছিল বেশি। অর্থাৎ সামাজিকভাবে কোন শ্রেণী আপনাদের গান শুনবে বলে আপনাদের আন্দাজ ছিল? কিংবা কাদের আপনারা বিশেষভাবে শোনাতে চেয়েছিলেন?

রাহী-একদমই আমার সময়ের গান আমি লিখছি। সুতরাং আমি এটা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেই শোনাতে চাইবো। ফলে প্রথমত একদমই নতুনদেরই আমরা শোনাতে চেয়েছি। কথার দিক থেকে দেখলে, সুরের দিক থেকে দেখলে, গানের পুরো শরীরের দিকে তাকালে দেখলে দেখবেন- বাংলা গানের নান্দনিকতার যে শাসন ব্যবস্থা আছে- রেঝিম/ গভর্ন্যান্স অফ ইসেথিটকস- সেটা আমাদের গানে ভেঙে দেয়া হয়েছে। আমাদের গানের শরীর একদম আলাদা। নতুনদের জন্য। অবশ্য এ অবস্থান নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান হচ্ছে; আমরা বাংলা গান করি। বাংলা গানের যে জায়গা, যে ধারাবাহিকতা, বিভিন্ন অর্থে- সেখান থেকে হেমাঙ্গ বিশ্বাসও আমাদের ঐতিহ্য, আমরা নজরুলেরও উত্তরাধিকার, রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকার, লালন সাঁইজিরও।

হেমাঙ্গ আপনার প্রিয় শিল্পীদের একজন।

রাহী-সেটাই। এ জায়গা থেকে আমাদের প্রধান নজর থাকে যে বাংলা সুর ঠিক হচ্ছে কি না। বাংলা গানের সুর আমরা কোথা নিয়ে যেতে চাই সেটা আমাদের খুব খেয়াল থাকে। একই সঙ্গে বাংলা গানের কথা কী হবে, সে জিনিসটা আমাদের চিন্ত্মার মধ্যে থাকে। আমরা দাবি করি- আমরা বাংলা সুরে রক গান করছি। লোকে ড্রামস আর ইলেকট্রিক গিটার বাজলেই সেটাকে ব্যান্ড বলে। আমরা ওরকম ফিঙ্ড মেম্বারশিপের ব্যান্ড না। আমরা গানের দল। কথা, সুর, যন্ত্র, সদস্য কোনো দিকেই আমাদের অচ্ছুৎ জ্ঞান নেই। বাংলা গান হচ্ছে কি না সেটা আমরা খেয়াল রাখি। সেক্ষেত্রে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো। গানে আমার বক্তব্য প্রকাশের জন্য যে যন্ত্র সবচেয়ে কাজে দেয় সেটাই আমরা ব্যবহার করতে রাজি আছি।

ছয় মাস তো হয়ে গেল আপনাদের প্রথম অ্যালবামের বয়স। এখন কি মনে হচ্ছে, আপনাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল কেমন? কাঙ্খিত শ্রোতাদের পাওয়া গেছে? ব্যবসায়িক সাফল্য কেমন?

রাহী-ব্যবসায়িক সাফল্যের কথায় পরে আসি। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আমাদের জ্ঞান লুফে নিয়েছে, পুরনোদের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের বন্ধু-বান্ধব যারা আমাদের গান নিয়ে চিন্ত্মা করে, আমাদের সমালোচনা করে, তারা আমরা সবাই মিলে অবাক হয়েছি। তরম্নণরা আমাদের গান অনেক ক্রিটিকালি অ্যাপ্রিশিয়েট করছে। শুনছে, গানের কথা নিয়ে কথা বলছে। আমাদের গানের কথা দিয়ে নিজেদের ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে রাখছে, আপনি নিজেও দেখছেন। সুতরাং আমাদের সময়ের যে ভাষা, সেদিকেই আমরা আছি বলে মনে হচ্ছে।

ব্যবসায়িক সাফল্য?

রাহী-বাংলাদেশের অডিও শিল্পের কথা আপনি জানেন, এটার কোনো মা-বাপ নেই। কোনো গণতন্ত্র নেই, ন্যায্য-অন্যায্য বলে কিছু নেই। যে যেভাবে পারে আর কী! লুটপাট চলে এখানে। ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। ফেয়ার বিজনেস বলে কিছু নেই। তারপরও আমাদের প্রযোজক ‘বাহিরানা’ আর পরিবেশক ‘জি-সিরিজ’র সুবাদে আমরা এখনো ভালো সাড়া পাচ্ছি।

এ পর্যন্ত্ম অ্যালবামটি লাভজনক হয়েছে?

রাহী-এটা তো ছয় মাসে বলা যায় না। প্রবণতা আছে। বাজারে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি আমরা।

এমনিতে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদের গানের দল হয়েছে। সে জায়গা থেকে ‘অলাভজনক’ প্রতিষ্ঠান হওয়ার কোনো ইচ্ছা কি আপনাদের আছে?

রাহী-অলাভজনক হওয়ার কিছু শর্ত থাকে। অ্যালবাম করার যে খরচ সেটা আমাদের কে দেবে? আমাদের সে সামর্থ্য নেই। যে অ্যালবামটা প্রযোজনা করবে, পরিবেশন করবে, তার তো খরচটা উঠে আসতে হবে। ওই অর্থে লোকে অ্যালবাম কিনে শুনুক সেটাই আমরা চাই।

বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে আপনাদের গান ডাউনলোড করা যায়, সেটা কি আপনাদের অনুমতিতে হচ্ছে?

রাহী-না, না। এটা সাইটওয়ালারাই করছে। বাংলাদেশের কপিরাইট আইনে এটা অবৈধ। এভাবে হলে পরে অ্যালবামের খরচ উঠে আসা মুশকিল হয়ে যায়। আমরা অবশ্য এটা নিয়ে জোরাজুরি করি না। পারলে আমরা শ্রোতাদের গান ফ্রি দিতাম।

এখন কি সেটা সম্ভব নয়?

রাহী-একটা পুঁজিবাদী সমাজে একজন শিল্পীকে বাঁচতে তো হবে। আর্থিক ফেরতের জন্য নয়, আমাদের টিকে থাকার জন্যও আর্থিক লাভের প্রশ্ন আছে। এ কারণেই শ্রোতারা কিনে গান শুনুক সেটাই আমরা উৎসাহিত করি।

নায়ক-এর গান শুনছিলাম, অন্য একজনের সঙ্গে। অ্যালবামের দ্বিতীয় গানটিতে এসে- পিয়াসা পাথর অঙ্গে কেন জাগালে হে… পর্যন্ত্ম এসে গায়কের অপেক্ষায় না থেকে দোস্ত্ম আমার নিজেই যোগ করে দিল ‘প্রভু’। অর্থাৎ পিয়াসা আমার পাথর অঙ্গে কেন জাগালে হে প্রভু। কিন্তু আপনার গানটিতে সেখানে ‘প্রভু’ নয় ‘প্রাণ’। অথচ তারপরই ‘প্রভু হে, দয়াময়, প্রাণনাথ প্রাণ’। প্রাণ আর প্রভু মেলাতে পারছে না আপনার তরম্নণ শ্রোতা। আপনার কি মনে হয়, মুশকিলটা কোথায়? অনেকেই গান বুঝতে পারছে না।

রাহী-হ্যাঁ। অনেকেই বলেছে যে তারা গানের কথা বুঝতে পারছে না। এখানে দুটো ঘটনা আছে। একটা হচ্ছে- বাংলাদেশে এখন গানের কথার মান এতো নিচে এটা নিয়ে কথা বলারই সুযোগ নেই। এখানে কবিতার চর্চা হচ্ছে না। কবিতা না হলে ভালো গানের কথা আসবে কোত্থেকে। সুতরাং গানের কথা ভালো হলে পরে সেটা এ রকম সমস্যা হবেই। দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছে- আমরা গানগুলোতে বাংলাদেশের মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতা আর অনুভূতি ধারণ করেছি। এটাতে অনেক শ্রোতাই অভ্যস্ত্ম নয়। হালকা কথার পুতুপুতু গানের শ্রোতারা কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন।

আমাদের অভিজ্ঞতা- আপনি যেভাবে ‘অতর্কিতে ছন্দ শাসন’ ভেঙেছেন সেটা শ্রোতারা আমলে নিয়েছে। যেমন সব সুরের ধরনে শ্রোতারা অভ্যস্ত্ম, সেসবের বাইরে এসে এমনকি আপনার নিজস্ব গায়কী তারাও উপভোগ করছে। কিন্তু গানের ভাষা তাদের কাছে অপরিচিত। যেমন ওই গানটা- ‘যদি আমায় আইতে কও দুপুর বেলা মুরগি রাইন্ধো না’, সেখানে যে মানুষটি নায়কের সঙ্গে সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখছে তাকে কেন নায়ক ‘বিশ রকমের শাক’ রেধে দিতে চাচ্ছে কিংবা ‘পঞ্চডালের সুবাস দিয়া’ ঘর ভরাতে চাচ্ছে সেটা আমার মনে হয় শ্রোতারা ঠিক ধরতে পারছে না। এ রকম নায়কের সঙ্গে শ্রোতারা পরিচিত না। যে নায়ক সোনার-কিষান, যুথে ফসল তোলে যুথে বপন করে; অথচ সে নায়কই দাবি করে, আলো তার স্বভাবের সীমানা ভেঙে তার পায়ের পাশে হাঁসফাঁস করে মরবে। এ সময়ে দাঁড়িয়ে হয়তো ‘কিষাণ-নায়ক’ এর কল্পনা শ্রোতাদের কাছে অসম্ভব মনে হয়। আপনার নিজের অভিজ্ঞতা কেমন এ ব্যাপারে।

রাহী-একটা বড় অংশের শ্রোতাদের কানে এটা বাংলা গানে, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় একটা নতুন ঘটনা। যে নায়ক তার প্রিয় মানুষকে বিশ রকমের শাক রেধে দিচ্ছে, যে নায়ক ছেঁড়া মশারি বাঁধে- এই যে অভিজ্ঞতা, জীবনের অভিজ্ঞতা এভাবে বলা, এতে শুরম্নতে অনেকেই মুশকিলে পড়েছে। তারপর কিন্তু এ অংশটা ঠিকই আমাদের গান গ্রহণ করেছে। কারণ তারা টের পেয়েছে এইটাই তো ঘটনা, এই তো আমাদের জীবন। আবার অনেকে কিন্তু শেষ পর্যন্ত্ম আর গানগুলো নিজেদের করে নিতে পারেনি। কারণ এ নায়ককে গ্রহণ করতে হলে নিজের ভেতরও একজন নায়ক থাকা চাই, আত্মসম্মান, আত্মচেতনা থাকা চাই। সেটা যাদের মধ্যে নেই তারা আর মুশকিল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মানুষ হিসেবে, সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে এ রকম নায়কের জীবন যারা চান তারা কিন্তু গানের কথার সঙ্গে এ অনভ্যস্ত্মতার বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন শেষ পর্যন্ত্ম। এ নায়ক কিন্তু প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক অর্থের পুরুষ কিংবা নারী নয়। এ প্রচলিত অভ্যস্ত্মতার যে সংস্কৃতি, সবকিছু মেনে নেয়ার সংস্কৃতি, এর বাইরে দাঁড়িয়ে যে মানুষের সঙ্গে নিত্যকার আনন্দ ভাগাভাগি করে বাঁচে সেই নায়ক। এ বোধ কারো হলে পরে সে কিন্তু নায়ককে নিয়ে দ্বিধায় পড়ছে না। এখন যখন অনেকেই মঞ্চের সামনে আমাদের গানের সঙ্গে গলা মেলান তখন বুঝতে পারি- বোধের মানুষ আছে। অনেক।

এ নায়ক মাংসপোলাও পছন্দ করেন না কেন?

রাহী-আপনি দেখবেন পুরো অ্যালবামজুড়ে নায়ক নতুন প্রেম আর নতুন আনন্দের জন্য বিদ্রোহ করেন। সে জায়গা থেকে দেখলে …। আপনি প্রশ্নটা আবার করেন …

ওই যে ‘দাওয়াত’ গানটা- ‘আমার ভালস্নাগে না বসতবাড়ি মাংসপোলাওময়/ তাই আমার সাথে স্বপনও সংসার তুমি বাইন্ধো না।’ নায়ক প্রিয় মানবীকে বলছে যে, তুমি যদি মাংসপোলাওময় বসতবাড়ি ভালোবাসো তবে আমার সঙ্গে সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখো না। কেন?

রাহী-‘মাংসপোলাও’ শব্দে মাংসপোলাও নামের খাবার জিনিসটিকে বোঝাইনি। এখানে ভোগবাদীতার যে জীবনযাত্রা সেটাকে সমালোচনা করা হয়েছে। নায়ক ভোগবাদী সমাজে থাকতে চায় না। অ্যালবামের সব গান মেলালে পরে দেখবেন- সেই এ সমাজ থেকে বেরোতে চায়, সবাইকে নিয়ে এবং নতুন সমাজ গড়তে চায়। যেখানে প্রেম করপোরেট দুনিয়ার ঠিক করে দেয়া সংজ্ঞা ও পরিধির বাইরে, পণ্যের বেঁচাকেনার ওপর যেখানে সংসারের সম্পর্ক দাঁড়ায় না। যে প্রেমে নতুন জীবনযাপনের আকাঙ্ÿা আছে।

নতুন প্রেমের কথা?

রাহী-হ্যাঁ। আমাদের প্রশ্ন- ‘কাকে তুমি প্রেম বলো বলো ইতিহাস/ বারম্নদগন্ধ নাকি ফুলের সুবাস/রক্ত বন্যা ঝড় মিছিল নাকি মৃতদের নাম লেখা মুর্দাফরাস’। আমরা বলছি, প্রেম-জীবন-বিদ্রোহকে নতুন করে চেনা দরকার। এ দরকার প্রসঙ্গে যারা অন্ত্মত চিন্ত্মা করতে চায়, তৎপর হতে পারম্নক বা না পারম্নক, তাদের জন্য এ অ্যালবামটা। এবং আমরা গানের দল হিসেবে আমরা সত্যিকার অর্থে একটা নতুন জীবনযাত্রার ডাক দিই। যে জীবনে এ নির্বিকার ভোগবাদ থাকবে না।

আপনারা লীলাকে যৌনবাদ(সেক্সিজম)বিরোধী বলেন।

হ্যাঁ। আমরা চাই ভালোবাসা থাকবে জীবনযাত্রার নিয়মিত অনুশীলনের মধ্যেই। লাভ অ্যাজ প্রাক্সিস। এমন জীবনযাপনের কথা আমরা বলি যেখানে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সেবা-সম্মান-মর্যাদা থাকবে। বিনয় থাকবে। যৌনবাদ-এ এটা সম্ভব না।

নায়ক অ্যালবাম থেকে আমরা যে কোনো একটা গানের কথা ছাপতে চাই। আপনি কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন?

‘নায়ক’ গানটাকেই। শ্রোতারা এটাই সবচেয়ে বেশি নিয়েছে।


January 17, 2021
“নিজের ভিতর নায়ক থাকা চাই”
  • Posted By : admin/
  • 0 comments /
  • Under : writings

January 17, 2021
‘We Vote Autocrats To Power’
  • Posted By : admin/
  • 0 comments /
  • Under : writings

August 27, 2012

Arup Rahee. Probe News, Monday, August 27, 2012, 12:09 am CST.

The future emerges from the womb of the past and the present. When I dream of the future Bangladesh, I see its past. I look at the recent history of the people. There is the Language Movement of 1952, the mass uprising of 1969, the Liberation War of 1971, then before all of that there was the struggle against colonial rule. Other than that, there have been many more struggles in our society — the Baul Fakir movement, the fight against class discrimination, and more. All these struggles have built Bangladesh as it stands today and how it will stand in the future. We lay our hopes in the struggle of the people; in where this struggle will lead the nation. Do we give this serious thought? We, the young generation of today, dream of a Bangladesh free of discrimination. We want a society where there will be harmony, love, empathy and friendship. That was the vision of the Liberation War. Unfortunately, over the past 40 years, this dream did not materialise. I envisage a Bangladesh where there is an openended space for democracy in the state system and in the society.

We speak of social change, of the failure of political leadership, However, what is this failure actually? I have to repeat, we built Bangladesh on a dream of democracy, but that democracy is yet to be established. Why are all the political parties and leadership failing in this regard? Actually, it all depends on their will. I believe that the democracy of a society depends on the democracy of the country’s economic structure. The more economic discrimination there is in a society, the more undemocratic it will be.

Take the United States for example, which is always in a state of emergency. Democracy there exists only for the rich. The poor do not enjoy democracy. It is alarming to see the number of voters falling steadily over there. As for the economic process through which Bangladesh is going, we are now at the primary stage. There is only an understanding among a handful of corrupt wealthy persons. They are opportunists who control the state. This socalled democracy is only for them. For the rest of the people, the rest of society, there is a kind of autocracy. I would term this an elected autocracy. In other words, we are the ones who vote in autocracy, we elect those who wield autocratic rule over us. The people are now understanding that this is not democracy. Democracy is the collective reflection of each person’s political, economic and cultural aspirations. This does not exist in the present political system or in the electoral system. However, I hope that even if not in the next five to ten years (I do not want to lay down a fixed time frame), but pretty soon the people will express their determination to be released from such a situation. This has already begun. If our ruling class who change their own economic status as agents of foreign companies, think this will give Bangladesh economic independence, they are mistaken. They will never bode well for our nation. The democracy prevailing in Bangladesh today is an imported democracy. Such forced democracy isn’t working here. The democracy which will be sustainable is the materialisation of the people’s expectations for which they have begun to strive.

Fed up with exploitation by the rulers over the past 40 years, the people are now looking into ways of true independence. The aspirations of the people must be taken into cognizance and then we can build a truly democratic Bangladesh. The day for true democracy in Bangladesh is not too far. I am truly optimistic in this regard. 

Arup Rahee. Probe News, Monday, August 27, 2012, 12:09 am CST.


12
site design, development and maintain by jakaria hossain. for any inquary contact: c.jakariahossain@gmail.com