সেইসব জীবন দৃষ্টি ও জীবন বিধান সংস্কার অথবা বাতিল করা দরকার, যেসব জীবনদৃষ্টি ও জীবনবিধান সমাজ, দেশ ও দুনিয়ায় নানারকম জুলুম ও বেইনসাফির জন্ম দেয়; বৈষম্য, বিদ্বেষ, মর্যাদাহীনতা সৃষ্টি করে; সামগ্রিকভাবে ও এককথায় জুলুমশাহীর জন্ম দেয়, লালন-পালন করে বা জুলুমশাহীকে টিকে থাকতে সাহায্য করে।

কিন্তু কি দিয়ে বুঝা যাবে কোন সব মত-দৃষ্টিভঙ্গি-ব্যবস্থা-জীবনবোধ-জীবনধারা- জীবনবিধান ইত্যাদি সংস্কার-পরিমার্জন-বদলানো-ফেলে দেয়া-বাতিল করা দরকার? কয়টা সূচক এখানে উল্লেখ করা যায়ঃ

যেসব মত- দৃষ্টিভঙ্গি-ব্যবস্থা- জীবনবোধ-জীবনবিধান >

১/ নিজের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-মত-পদ্ধতিকে প্রশ্নের উর্ধ্বে মনে করে; নিজের জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে, সে জ্ঞানের প্রত্যয়ন /প্রমাণ / কর্ত্রিত্ত্ব / অধিকার নিয়ে প্রশ্নহীন থাকে , প্রশ্ন উত্থাপনকে অন্যায়/অপরাধ মনে করে

২/ অন্যের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-মত-পদ্ধতিকে অশ্রদ্ধা করে , বিবেচনায় নেয় না

৩/ নিজেকে সকল বিচারে জগতের শুধু শ্রেষ্ঠ না , একমাত্র মনোনীত , নিজের চিন্তা-মত-ইচ্ছা-অভিরুচি চাপিয়ে দেয়াসহ সকল কিছুর অধিকারী মনে করে

৪/ অন্যের খাদ্যাভ্যাস, যৌনবৈশিষ্ট, গায়ের গড়ন ও রঙ, ভাষা, পরিচ্ছদ, আবাস ইত্যাদি নিয়ে উপহাস , তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ; জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-উপাসনা-রুচি-পরিচ্ছদ ইত্যাদির দেশ-কাল- পরিবর্তন-বিবর্তন-সংস্কার ইত্যাদিকে বিবেচনায় নেয় না

৫/ এক কালের এক দেশের এক পাত্রের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-মত-পদ্ধতিকে চিরায়ত, শ্রেষ্ঠ ও সার্বজনীন মনে করে; নিজের মত ও পথকে জগতের উপর জুলুম করে প্রতিষ্ঠা করতে চায়

৬/ পুরুষতন্ত্র ও বিষাক্ত পুরুষালীতাকে স্বাভাবিক, প্রশ্নের উর্ধ্বে, ন্যায্য, ঐশী, চিরায়ত ইত্যাদি মনে করে; জন্মসূত্র পুরুষভিন্ন অন্য সকল লিঙ্গের মানুষদের ‘অস্বাভাবিক’, ‘পাপী’, ‘দুষ্ট( কোনো দোষে দোষী), ‘ছোট’/ ‘ইতর’ ইত্যাদি মনে করে, পুরুষতান্ত্রিক যৌনরীতির বাইরের প্রেম-বন্ধুত্ব- যৌনরীতিকে অন্যায়/ পাপ/ ইতর/ ছোট/নীচতা হিসেবে বিবেচনা করে

৭/ বৈষম্য, বিদ্বেষ, বর্ণবাদী –পুঁজিবাদি- পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গি লালন-পালন করে, গ্রহণযোগ্য মনে করে, প্রস্তাব করে, চলতে সাহায্য করে; ফ্যাসিবাদ জন্ম দেয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ ও পরিচয়বাদ লালন-পালন-প্রস্তাব করে।

আরো যেসব সূচক যুক্ত করা যায় মনে করেন, তা এই তালিকার জন্যে প্রস্তাব করলে স্বাগত জানাবো।

‘পাপ-পুন্যের কথা আমি কারে বা শুধাই’- লালন ফকির।

আলেক সাঁই ।

২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ঢাকা।