arup raheearup rahee
  • about
  • initiatives
  • resources
  • Special Programs
    • অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা ( mentorship) কার্যক্রম
    • করণ।। Koron ।। সহজ জীবনধারা
    • জীবন জিজ্ঞাসা।। অরূপ রাহী’র সঙ্গে
  • about
  • initiatives
  • resources
  • Special Programs
    • অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা ( mentorship) কার্যক্রম
    • করণ।। Koron ।। সহজ জীবনধারা
    • জীবন জিজ্ঞাসা।। অরূপ রাহী’র সঙ্গে
February 13, 2021
বামরাজনীতির বিকাশের প্রশ্নে আমি বিনয় সহকারে, আমার দায় নিয়েই কিছু পর্যবেক্ষন এবং মতামত জানাই
  • Posted By : admin/
  • 0 comments /
  • Under : writings

বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হবার পর নাগরিক-বুদ্ধিজীবীদের সাথে একটা মতবিনিময় সভায় আমাকে দাওয়াত দেন শ্রদ্ধাভাজন সাইফুল হক। আমি সেখানে যাই মুলত জানতে বুঝতে এবং শিখতে। এক পর্যায়ে আলোচনার জন্যে আমার নাম প্রস্তাব করা হলে আমি ধন্যবাদ জানাই জোটের উদ্যোগের জন্যে, জানাই যে এই জোট গঠনের উদ্যোগ আমার মত অনেকেরই উৎসাহের এবং আশার কারন ।

তবু, বামরাজনীতির বিকাশের প্রশ্নে আমি বিনয় সহকারে, আমার দায় নিয়েই কিছু পর্যবেক্ষন এবং মতামত জানাই। যার মোদ্দা কথা ছিলো, ব্যতিক্রম বাদে, মোটাদাগে, বাংলাদেশের বাম্পন্থী রাজনীতির কাগজপত্র-লিখাবলা এবং চলা দেখলে বুঝা যায়: শ্রেণী, রাষ্ট্র, রাজনৈতিকপ্রতিষ্ঠান বা পলিটি, জাতি, জাতীয় মুক্তি ও জাতীয়তাবাদ, লিঙ্গ এবং লৈঙ্গিক রাজনীতি, উপনিবেশ এবং ঔপনিবেশিকতা, প্রগতি আর বিপ্লব প্রশ্নে দুনিয়ার চিন্তা এবং অনুশীলনের জগতে যত পরিবর্তন এবং অর্জন হইছে, ব্যতিক্রমবাদে বাংলাদেশের বাম্পন্থা সেসবের ধারে কাছে যাওয়া তো দুরের কথা, খোজ খবরও পর্যাপ্ত রাখেনা।

উদাহররণ আকারে, বিশেষ কইরা সেক্যুলারিজম প্রশ্নে গড় বাম্পন্থা যেসব ধ্যান ধারণা পোষন এবং লালন করে, তা দুনিয়ার ওয়্যার অন টেরর প্রকল্প এবং তার ‘সেক্যুলারিজম’-এর বয়ান আর পলিটিক্সের মধ্যে বান্ধা পইড়্যা যায়। এসব থিকা বের হবার তাগিদ দেই আমি।

আরো কিছু কথার মধ্যে এও বলি যে, জাতীয় সম্পদরক্ষাসহ সামাজিক এবং জাতীয় ইস্যুতে নানান আন্দোলনে বামের জোরালো ভূমিকা থাকলেও ‘বাস্তব’, ‘ক্ষমতা’র রাজনীতিতে বামের ব্যররথতার কারন অনুসন্ধান করা দরকার, যদি ক্ষমতা নেয়াকে বাম অপবিত্র জ্ঞান না করে। ন্যুনতম ‘বুর্জউয়া গণতন্ত্র’ যেহেতু বামজোটের ন্যুনতম লক্ষ্য, তাইলে যেকোনো দলের স্বৈরতন্ত্র থিকা কেম্নে সমাজকে বাইর করা যাবে? সেটা মন্দের ভালো কিংবা আপদ-বিপদ তত্ত্ব দিয়া না বুইঝ্যা শ্রেনী এবং জাতীয় প্রশ্নের সম্মিলন- তথা গণতান্ত্রিক পলিটি বিকাশের রাজনীতির মাধ্যমে করা দরকার মনে করি বলে জানাই।

বলি যে, যেকোনো প্রকার, যেকোনো দল/জোটের স্বৈরতন্ত্র মোকাবেলা এবং দেশকে গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাবার জন্যে বাস্তব পদক্ষেপ কি- সেটা নিয়ে ভাবা দরকার। জনমত-জনস্বার্থ, জনঅভিজ্ঞতা, সামাজিক বাস্তবতা এবং নিজদের আদর্শ- উদ্দেশ্য- সাংগঠনিক ক্ষমতাকে কোন মাত্রায় কি সম্পর্কে বাঁধলে ক্ষমতার এবং ব্যবস্থার আশু পরিবর্তন হয়- সেটা ভাবা দরকার- এটাও বলি সেদিন।

এও আমরা দেখি, যে, বাংলাদেশের মধ্যবিত্তকেন্দ্রিক বামরাজনীতির একটা বড় বৈশিষ্ট হইলো জলাচল ধর্ম আর ছুতমার্গ।

এর মধ্যে, কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র নাগরিক সমাবেশে জোনায়েদ সাকির হাজির হওয়া নিয়ে বাম মহলে বেশ আলোচনা হচ্ছে। সব মিলায়ে, বাংলাদেশে বাম রাজনীতি এক ক্রান্তিলগ্নে। যাহোক, বামজোটের মতবিনিয়ময় সভায় আমার ২ মিনিটের বক্তবের সাথে আজকে আরো কিছু প্রশ্ন/পয়েন্ট যোগ করা দরকার মনে করি। এসব প্রশ্নের আলোচনা, উত্তর খোঁজা আজকের বাংলাদেশের বাম্পন্থী রাজনীতিতে লড়াইয়ের সংহতির জন্যে প্রয়োজনীয় বোঝাপড়া তৈরীতে সাহায্য করবে বলে মনে করি।

পয়েন্ট গুলার মধ্যে আছেঃ
-নৈতিকতাবাদী( মরালিস্ট/ moralist) রাজনীতি কি কোনো অর্থেই মার্ক্সবাদী রাজনীতি – যখন কিনা তার সাথে ব্রাম্মন্যবাদী পুরুতঠাকুরের ইস্টনাম জপের মিল? নাকি মার্ক্সবাদী রাজনীতি এথিক্স( ethics) তথা চলার নিয়মের কথা বলবে? মার্ক্সবাদী রাজনীতি কি মরালিষ্ট, না কি এথিক্যাল?

– আমাদের ‘সেক্যুলারিজম’ কি হিন্দু এলিটের বর্ণবাদী- ব্রাম্মন্যবাদী সেক্যুলারিজম? যা আদতে ধর্ম তথা ইসলাম বিদ্বেষী?

-শ্রেণী বলতে আমরা বিশুদ্ধ কোনো সর্বনাম বুঝি ? যেমন ‘শ্রমিক’ , ‘কৃষক ‘ ‘বুর্জুয়া’ , ‘সামন্ত’ ইত্যাদি? শ্রেনীকে আমরা নিরঞ্জন অর্থে নিতেছি না তো? এটা ভূল। শ্রেনী একটা সর্বকালের জায়মান ব্যাপার। তাই একই ‘শ্রেনী’তে ভিন্ন ভিন্ন প্রবণতা, লক্ষ্য, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির দেখা মেলে। ফলে, শ্রমিকতা, ক্রিষকতা, বড়লোকি- ইত্যাদিকে যান্ত্রিক , অচল-অবশ বস্ত হিসেবে দেখা মানে মানুষের বহু সম্ভাবনাকেই বাতিল করে দেয়া । লিংগ যেমন তরল এবং সামাজিক-সাংস্ক্রিতিক নির্মিতির ব্যাপার, শ্রেনীও তেমন। সমাজে প্রতিনিয়ত এই নির্মিতি চলে, গড়ে, ভাঙ্গে। ধীরে কিংবা জোরে।

-কখন শ্রেনী প্রশ্ন আর জাতীয় কর্তব্য প্রশ্ন এক হয়া যায়? জাতীয় সম্পদ রক্ষার লড়াই আমরা কেন করি? গৃহযুদ্ধ কাদের পক্ষে আর কাদের বিরুদ্ধে যায়? মার্ক্সবাদী রাজনীতির কাঠামোয়, বুর্জুয়া গণতন্ত্র এবং বুর্জুয়া পলিটি চিরন্তনভাবে গণবিরোধী? কখন, কোন মুহুর্তে শ্রমিক/ক্রিষক/নিপীড়িত জনতার কর্তব্য হয় ন্যুনত্ম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে লড়া?

– সেই লড়াইয়ে আমরা কাকে বাদ দিবো আর কাকে দিব না? কার সাথে আলোচনা/বৈঠকে বসবো আর কার সাথে বসবো না? সমাজের নানা ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গের-শ্রেণির সাথে আমার ‘বিপ্লবী’ রাজনিতি শুধু জলাচলের রাজনীতি করবে চিরকাল? আমি ছাড়া বাকি সবাই অশুদ্ধ, পাপী, বিধর্মী, ছোটলোক? এই নৈতিকতার কষ্টিপাথর আমি কবে হইলাম? কেন হব?

– আমাদের মুক্তিযুদ্ধের, ইতিহাসের একটা মাত্র ন্যারেটিভ বা বয়ান, যা কিনা গণবিরোধী, তা মেনে চলতে বাধ্য করায়, একটা কোনো দলীয় স্বৈরতন্ত্র বহাল রাখার পক্ষে আমার জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ভূমিকা রাখে, তখন আমার করনীয় কি?

-সমাজের কোন অংশকে ফেলে দিয়ে আমি বিশুদ্ধ ‘কমিউনিস্ট-বাম্পন্থী-সমাজতন্ত্রী-দেশপ্রেমিক-উদারগণন্ত্রী’র সাথে ঐক্য করবো? এই ব্র্যাকেট এবং হাইফেন কি কি শর্তে লম্বা হয়?

– ধরাযাক এখন বাংলাদেশে সঙ্খ্যানুপাতের ব্যবস্থায় ভোট হইলো, আমরা কত আসন আর ভোট পাবো ? বাকীদের সাথে আমরা পার্লামেন্টে বসবো ? সেখানে আলাপ-সংলাপ হবে না? বিশেষ কোনো মুহুর্তে তাদের সাথে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ , ‘ সাম্য’ , মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা’, ‘ সমাজতন্ত্র’ , ‘ শ্রমিক- কৃষকের স্বার্থ’ ইত্যাদি প্রশ্নে কখনোই অন্য কারো সাথে আলাপআলোচনা করার দরকার হবেনা? সংসদ, পলিটি, গণতন্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কখন গড়ে তোলা দরকার, কখন কোন মাত্রায় পরিবর্তন হওয়া দরকার- তা কিসের ভিত্তিতে ঠিক হবে? কারা সেকাজে নেতৃত্ব দিবে? ইত্যাদি। অলমতি বিস্তরেনঃ ।

এক সনের মুক্তিযোদ্ধা যেমন চিরকালের মুক্তিযোদ্ধা না, এক্কালের বাম্পন্থীও চিরকাল বাম্পন্থী না। ইতিহাসের কাদামাটি গায়ে না লাগানোর যে বিশুদ্ধবাদী পথ, তা কখনই ইতিহাস বদলায় না। সুদুর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কাজ করা মানে বর্তমানের ভূমিকা ভূলে যাওয়া নয়। বর্তমান দূরে রেখে সুদুরের পিয়াসী হইলে অদুর-সুদুর কোনোখানেই ঐতিহাসিক রাজনৈতিক কর্তব্য করা সম্ভব হয় না। সুদুর ভবিষ্যত আজকের বর্তমানতার উপরে দাঁড়াবে। বরং, সুদূর লক্ষ্যকে সামনে রেখে বর্তমান বদলাতে থাকার রাজনীতিই বিপ্লবী রাজনীতি। এটাই ইতিহাস দেখার , বদলানোর বস্তবাদী পথ। তাতে ইতিহাসের কাদামাটি গায়ে লাগে। সেসব চিহ্ন ধরেই ইতিহাস রচিত হয়। আমরা যেন সেই ইতিহাসের স্বাক্ষী হইতে পারি।
‘পাবিরে অমূল্য নিধি, বর্তমানে’।

বামজোটের চ্যালেঞ্জ হইলো এসব দার্শনিক, রণ্নৈতিক এবং কৌশলগত দিক বুঝে জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক ঐক্যের পথ বিকশিত করা।

সেটা বর্তমান বাম না পারলে ইতিহাস অন্য পথ নিবে। অথবা নতুন বাম রাজনীতি সমাজে বিকশিত হবে। গণতন্ত্রের দার্শনিক এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়ার লড়াই যেমন করতে হবে, তেমনি বর্তমানে হাজির হওয়া গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই করেই যেকোনো বামকে সমাজে নিজের জরুরত এবং ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্য পথ নাই।

সংহতি।


February 13, 2021
‘লুঙ্গি কাহিনী’ বইয়ের অংশ বিশেষ
  • Posted By : admin/
  • 0 comments /
  • Under : writings

[ব্যক্তিগত ব্যাপার রাজনৈতিক ব্যাপার। জরুরী সত্য কথা। নিজের কোন ঘটনা সমাজে প্রকাশযোগ্য ও প্রয়োজনীয় আর কোনটা নয়-এটা একটা নির্বাচন। একটা সিদ্ধান্ত যেমন ধরা যাক,’ লুঙ্গি কাহিনী’র কথা। এই কাহিনী লিখা শুরু হয় শহিদুল আলম ও ব্রাত্য রাইসুর মধ্যে ই-মেইল বিনিময়ের সুত্রধরে। সেখানে প্রসঙ্গক্রমে এই লেখক ও তার লুঙ্গি পরা বিষয় হিসেবে আছে। সেইসূত্রে আমার কিছু বক্তব্য যুক্ত করে এই রচনা এই কথাবার্তা, যদি ধইরাও নেই যে আমাকে কেন্দ্র করে, তবু, সমাজে এই ঘটনা ঘটতেছে, আমি নিজেও একজন হিসাবে সমাজের এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করতেছি। আমি মনে করি, এই ঘটনা সমাজের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে পেশ করা দরকার, কারণ একটা গুরুতর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যুতে এই তর্ক। এখানে, এই পেশকার, ধরা যাক, তর্কে/অনুশীলনে ‘কামিলগার’ নন, তাতে ইস্যু এবং তর্কের তাৎপর্য কমে না। বরং বোঝাপড়া তৈরী করতে সাহায্য করে। তাই সংকলনে এই কাহিনীর ভুক্তি।

লুঙ্গি কাহিনী/ যাপন ও সম্পর্ক শাস্ত্রের একটা ভূমিকা ।। অরূপ রাহী
প্রকাশকালঃ ২০০৯।
প্রকাশকঃ খড়িমাটি।
প্রাপ্তিস্থানঃ সংহতি বইঘর, কনকর্ড এম্পরিয়াম, কাটাবন, ঢাকা। ]

প্রিয় ব্রাত্য,
সেদিন কথা বলে ভালো লাগলো। একটা জিনিস আপনাকে বলা হয় নাই। আমি আপনার পোশাকের ব্যাপারে বিশেষ করে আপনাকে শ্রদ্ধা করি। ধরে নিচ্ছি এটা আপনার রাজনৈতিক অব স্থান থেকেই এসেছে। সে তো আমাদেরসকল কাজের ক্ষেত্রেই সত্য। তবে কথার সাথে কাজের যেখানে এতো ফারাক থেকে যায়, সেখানে আপনার চলা ফেরার ক্ষেত্রে পরিস্কার অবস্থান রাখেন দেখে আমার খুব ভালো লাগে।
আপনাকে অভিনন্দন।

শহিদুল
……….
ডিয়ার শহিদুল
আমি তো এক বছর ধইরা অষ্ট্রেলিয়ায়। আমার ধারণা আপনি রাহীর সঙ্গে আমারে মিলায়া ফেলছেন। মানে লুঙ্গি পরা রাহী। আমি জানি না। জানায়েন।
এমনিতে আমি ভালো। কিন্তু পোশাক তো আমার রাজনৈতিক না। আর যদি আপনি আমারে রাহী বইলা ভুল করতেছেন তবে বলি রাহীর ওই লুঙ্গি পরা আমার আপত্তির কারণ পোষাক যদি নিশান হয়া দাড়ায় তা নিয়া…আগে নিশ্চিত হয়া লই,পরে কথা বাড়ামু।
ভালো থাকবেন।

রাইসু
……

রাইসু,
হ ভাই, আমি ভুলই করছি। এবং তর্ক করতে রাজি আছি। তবে যোগাযোগ তো হয়া গেলো। গোলামী পোশাক ছাড়া আমরা ভদ্র হইতে পারি না, এটা আমার জন্য খুব বিরক্তির ব্যাপার।তবে এইটা নিয়ে লম্বা আলাপে ঢুকতে চাই না। এর বাইরেও অনেক কাজ আছে। ভালো থাইকেন।
শহিদুল

আলাপের বাইরে আপনের অনেক কাজের খবর অবশ্য পাই। লম্বা আলাপে আমারও ইচ্ছা নাই। দুই লাইনে সারি। আমাগো ভদ্র হওয়া যে দরকার তাও সাহেবরা শিখায়া গেছে। ভদ্রতা আমদানী করা জিনিস, গোলামীর মতই। তাইতে ওইটা উনাগো পোশাকেই হইতে হবে, যেমন উনাগো আচারেই ভদ্রতার প্রকাশ। গ্রামের সব মানুষ বিপ −ব না করতে না করতেই লুঙ্গি পরতেছে। শহরের বিকল্প বুদ্ধিজীবী হইতে গেলে বিকল্প পোশাক তো একটা লাগবই। আর এনজিও-ওয়ালারা এই রকম রুরাল (অরগানিক) বুদ্ধিজীবী দেখলে অনেক খাতিরও করে। কি আর করা! আপনে লম্বা আলাপে ঢুকবেন না।

আপনারে সালাম জানাই। ভুলের কারণে যে আপনের কথা শোনা গেল তাতে আমার অনেক আনন্দ।

রাইসু

২.
সাল এর হিসেবে ২০০০-এ শুরু এই ঘটনার। আমরা তখন কয়েকজন বন্ধু মিলা লোকজ নামে একটা সংগঠন শুরু করছি। শ্যামলীতে একটা বাড়ীর পিছন দিকের অংশে, নীচতলায়, দুইরুমের একটা জায়গা ভাড়া কইরা আমরা সেই খানে কাজ করি, থাকি উন্নয়নের রাজনীতি আমাদের একটা গবেষণার বিষয়। ‘রাজনীতি’, ‘এনজিও’ থিকা নানারকম লোকজন আমাদের ওইখানে আসে-টাসে।

একরুমে আমরা থাকি-ঘুমাই, আরেক রুমে কাজ করি। মাঝখানে একটা ভাঙ্গাচুড়া দরজা। প্রতিদিন সকালে ‘ভিতরের’ রুমে গোসল খাওয়া-দাওয়া সাইরা ‘লুঙ্গি’ খুইলা ‘প্যান্ট’ পইরা ‘বাইরের রুমে’ আইসা ‘অফিস’ করি। আমার বন্ধুরাও দুএকজন তাই করে। প্রতিদিন এই ‘ঘর’ ‘বাহির’ করি। ‘অফিস’ এ ‘বাইরের’ লোকজন আসে, আমি লুঙ্গি খুইলা, প্যান্ট পইরা তাদের সঙ্গে সালাম-আদাব করি। কিন্তু, যেমন, ‘বাজার’ করতে যাই ‘লুঙ্গি’ পইরা। ‘বাজার’এও অনেক লোকের সাথে দেখা হয়। ‘লুঙ্গি’ পইরা সালাম আদাব করি, অসুবিধা হয় না। আমার একটু কেমন কেমন লাগে।

মানুষ লুঙ্গি পরলে একরকম, প্যান্ট পরলে আরেক রকম!… নিশ্চয় পোশাক ছাড়া আরেক রকম! তখন ঘরে থাকলে সেটা ঘরের ভিতরে আরেক দুনিয়া! বাইরে থাকলে আরেক সেইটারে বাইরের জগতে মিলায়া ফেলে ল লোকে তারে ‘পাগল’ বলে, ‘অপ্রকৃতিস্থ’, ‘অ-সংস্কৃত’, ‘আনকালচারড’ বা আরো কিছু বলে। আমি ভাবলাম, অতদুর না হয় নাই গেলাম লুঙ্গি-প্যান্ট-এর আইল ভাঙলে ‘বাইরের জগতে’ কি হয় একটু দেখি।

২.২
আমি লুঙ্গি পইরা সালাম আদাব করা শুরু করলাম। ‘অফিস’ এ বসা শুরু করলাম, বাইরে, অন্য ‘অফিসে’ যাওয়া শুরু করলাম লু ঙ্গি পইড়া। সাথে আছে লম্বা চুলের ঝুটি আর ওড়না আমারে দেইখা ‘শিক্ষিত ‘দের কেউ আড়ালে, কেই সামনে দিয়া মুচকি হাসে, কেউ বলে ‘বাউল’, কেই বলে ‘নগর বাউল’, বলে ‘কাদের সিদ্দিকীর দলে গেছেন নাকি’, কেউ বলে ‘আসল’, কেউ বলে ‘লোকজ’, কেউ বলে ‘ভং ধরছে’। ‘বামপন্থী’ কেউ বলে ‘অ্যানার্কিস্ট”, গ্রামের ‘সাধারণ’ নারী-পুরুষ অনেকেই বলে,’মেয়েদের মতো’। ‘শহরে’ তো বটেই। কেউ কয় ‘হাফ লেডিস’…। গরীব রিক্সাওয়ালা কিংবা ঢাকার লোকাল বাসের কন্ডাকটরের কাছে আমি কখনো ‘অ াপনি’, কখনো ‘তুমি’। কখনো কয় ..’লেডিস নামব’..কখনো ‘সাধু’ ফকির, কখনো অন্য কিছু। …এনারা দেখছি প্যান্ট-শার্ট পরা লোকজনরে ভাই এবং আপনি সম্বোধন করেন।…. পুলিশ যে কতবার ধরছে, চেক/সার্চ করছে তার ইয়ত্তা নাই। তাদের ‘সন্দেহ’ হয়। দেইখ্যা ‘ভদ্রলোক’ মনে হয় না। (থ্রি-কোর্য়টার পড়লে খালি ভদ্রলোক মনে হয় তাই না, এলিট-এলিট একটা ভাব আসে! আহা, একদিন থ্রি কোয়ার্টারও পুরান/ক্ষ্যাত হয়া যাবে! আসবে নতুন কিছু! এলিট /স্মার্ট ভাবের নতুন কিছু!) ‘জঙ্গি’ (দাড়ি-চুল আছে, ফতুয়া, সাদা ওড়না/গামছা আছে,), ‘গাঁজাখোর’, এমন কি ‘বেশ্যার দালাল’ও মনে হয় হয়ত!
মাল্টিকাল্টি জাতিসংঘের বা তার শাখা-প্রশাখ ার কোনো মিটিং-এ সমস্যা হয় নাই।আর্ন্তজাতিক কোনো বেসরকারী মিটিং-এ তো নয়ই। কোনো কোনো তারকা হোটেল বা ব্র্যান্ড খাবার দোকানেও না। কিন্তু বাংলাদেশে শেরাটন, সোনারগাঁও, লা ভিঞ্চি, আমেরিকান ক্লাব, বসুন্ধরা শপিং মল, স্টার সিনেপ্লেক্স, কুপারস (খাবারের দোকান).., আরো কোন কোন ক্লাব ..এইসব (‘প্রথম শ্রেণী’র নাগরিকদের) জায়গায, লুঙ্গি নিয়া ঝামেলা হইছে। ওই সব জায়গায় ‘লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তির প্রবেশ নিষেধ’। আমি তাদের ‘পোশাক বিধি’ নিয়া জানতে চাইছি। অনেক জায়গায় আমার সঙ্গী বন্ধুরা আমার ‘পরিচয়’ দেয়ার পর সেখানকার কর্তারা আমাকে ‘যাচাই-বাছাই’পূর্বক প্রবেশাধিকার দিছেন। আমি যে ‘আর্টিষ্ট’, ‘কবি’, ‘গায়ক’!….অনেক জায়গায় তাও ঢুকতে দেয় নাই। যদিও ঐসব জায়গায় ফরমাল পোশাকের বাধ্যবাধকতা আইন বা বিধিবিধান আকারে নাই। প্রথা। শাসকের প্রথা। অন্যরা অনুসরন-অনুকরন-পালন করতেছে মাত্র। আমি ছোটোলোক চাষা/রিক্সাওয়ালা কিংবা ভিক্ষাজীবী তো হইতে পারি! ছোটোলোকরা এইরকম দামী জায়গায় ঢুকলে ‘বড়লোকদের দোকানের অপমান!

অনেকে ‘চুপ’ থাকে। কিছু বলে না। অনেকে আড়ালে মন্তব্য করে। সামনে করে দু একজন। আমি তখন যেখানে যেরকম বইলা সারি। অনেক অফিসে যাইতে নিরাপত্তাকর্মী আটকায়। অনেক অফিসের ‘প্যান্ট পরা বড় বস’ আমারে ‘দেখতে পারে না’।… ‘বিদেশ’ও মিটিং-সিটিং এ যাই লুঙ্গি পইরা। চাই বা না চাই, এই ‘এক্সোটিক’পোশাকের কারণে ‘একস্ট্রা’ ‘খাতির’ কইরা কেউ নগদ নারায়ন সাধে নাই। মিটিং-সেমিনার-সম্মেলনে যারা আসে টাসে তারা পোশাকের এই ‘লুঙ্গি’ ঘটনায় বেশির ভাগই নির্বিকার। আমার ধারণাও ছিল সেইটা অনেকে এইরকম ‘অর্গানিক’,’লোকাল’, ‘রুরাল’, ‘ইন্ডিজেনাস’, ‘স্পেশাল’ মাল অনেক দেখছে। অনেকে দেখলেও খেয়াল করে না। অনেকের দেখার দরকার বা ইচ্ছা নাই। সুবিধা নিতে চাইলে তার লাইন আলাদা। ফল হয় কি-না আমি জানি না।

৩.
আমি, সাধারণ বিচারে একজন ‘ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত’, ‘সমতলের বাঙালি’ ‘পুরুষ’ হিসেবে পাবলিক-প্রাইভেট/ঘর-বাহির-এর যে অভিজ্ঞতা লুঙ্গি কাহিনী মারফত পাইলাম, আমি নিশ্চিত ‘নারী’ বা অন্য পরিচয়ের কারো ক্ষেত্রে তা অন্যরকম। সমাজে পুরুষের পাবলিক জগত এক রকম, না রীর আরেক। সাধারণভাবে পুঁজিবাদ পাবলিক-প্রাইভেট ভেদ দিয়া কাম সারে। নারীর বেলায়ও তার প্রমাণ পাওয়া যাইব। কিন্তু সমাজে নারীত্ব ও পৌরুষের সংজ্ঞাও তো নির্মিত ও পরিবর্তনশীল। ফলে বিশেষ অবস্থার বিশেষ অভিজ্ঞতা হবার কথা।….

আমরা নানা কাজেকর্মে ও চিন্তায় ‘আধুনিকতা’ শিক্ষা’, ‘ভদ্রতা’…এই সব নিয়া প্রশ্ন তুলি অনেকেই এই প্রশ্ন আজকাল করেন। বলি যে ‘কোক’-‘পেপসি’, মাইস্পেস, হাই-ফাইভ, ডিজুস, থ্রি-কোয়ার্টার, বিলিয়ার্ড, পুল, মাংসপেশি, নাভি, টাটু,…ঝুটি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, হাফ-পাতি-ফুল-লিবারেল ‘ফ্রেন্ডশীপ’ এবং ‘প্রেম’ দিয়া কি আমরা ‘স্মার্টনেস’ বুঝব? বলি যে আমরা যা করি, যা পরি, যা খাই, যা ভাবি, যা বলি, যা গোপন করি, যা প্রকাশ করি, যা প্রকাশ্য গোপন করি, যা গতরে রাখি, যা মনে রাখি, যা চাই কিন্তু পারিনা,…সব দিয়াই আমি/আমরা আমাকে/আমাদেরকে বুঝবো। সবই অবস্থা, থাকা, না থাকা, ইচ্ছা, অনিচ্ছা,আকাঙ্ক্ষা…ইত্যাদির প্রকাশক। যে শর্টস পরে, থ্রি- কোয়ার্টার পরে, নাইকির জুতা গেঞ্জি পরে, কিংবা নাম না জানা কোম্পানির মালপত্র পরে, তারও পোশাকের সামাজিক নাম-নিশানা আছে। একে অন্যের চিহ্নায়ক। সমাজের, প্রতীক ব্যবস্থার অংশ। ভাষা। আমি আপ্নি চাই-না চাই, জানি-না-জানি। নিশান না থাকারও নিশান আছে। সকলেই নিশান উড়ায়া চলতেছে। না টের পাইলেও উড়তেছে ঠিকই। কি নিশান, কেন নিশান, কিসের নিশান-সেইটা বড় বিষয়। এই প্রতীকায়ন চলতে থাকে। চিহ্ন বদলায়। নির্ভর করে কারা ক্ষমতায়। উৎপাদন পদ্ধতির, অর্থনীতির ধরন, সংস্কৃতির ধরন। ফরমাল পোশাক ফরমাল ক্ষমতা। তারা চাইলে ইনফরমাল পোশাক ফরমাল অনুষ্ঠানেও পরতে পারেন। সমস্যা নাই এই ক্ষমতায় স্বীকৃতরাও চাইলে পারেন। শাসক শ্রেনীর সংস্কৃতির দাপট, আবশ্যক শৃংখলা বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি দালালী বা মোসাহেবী, লুম্পেন, হীনমন্যতার সংস্কৃতি।

নিখাদ, নিরপেক্ষ, কেবলমাত্র ‘ফ্যাশন’ বইলা কিছু নাই। পিওর স্টাইল কিছু নাই। দেখতে ‘সুন্দর’/’মজার’/’দারুণ’/’নতুন’/ ‘সাধারণ’ একটা কিছু পিনলেই/নিলেই/খাইলেই হইল এত নিরীহ এবং সরল? নির্বিকার ‘সরলতা’ অন্যায় সন্ত্রাসের পক্ষে যায়। ‘নিরপেক্ষতা’ও। ‘হাজার বছর’ ধইরা লুঙ্গি পরা হইল ‘হাজার বছর’ ধইরা তার নিজের নির্মান-আবিষ্কার-বিনির্মান প্রকাশ-গোপন-ভাব-অভাব। খেয়াল-খুশি মাত্র না। শীত-গরম শুধু না। স্বীকৃতি আদায় বা নিজের অস্তিত্ব জাহির মাত্র না। আসনা-বাসনা পূরণ মাত্র না। এক বা একাধিক, নানা মাত্রায়। এর ইতিহাস-ডিসকোর্স-কুরসিনামা-রাজনীতি-অর্থনীতি আছে। ‘আমি’র শুধু টেকনোলজি না, প্রত্নতত্বও আছে। তা কেবল অতীতের না। বর্তমানের। ভবিষ্যতের।

উপনিবেশ, তার ‘ভদ্রতা’, পুঁজিতন্ত্র, তার ‘উদারতা’, ব্যক্তিমালিকানা ও তার সংস্কৃতির দাপট, পুরুষতন্ত্র, দমনতন্ত্র-এসবের কারণে আপাত নিশানবিহীনতা, প্রতীকবিহীনতা ঘটে প্রতিরোধে নতুন নিশান/প্রতীক/চিহ্ন দরকার হয়। প্রতিরোধ নতুন নিশান/প্রতীক রূপলাভ করে। প্রতিরোধ নতুন প্রতীক তৈরী করে। হায়ারারকি কবে থাকবে না, আমি দিন-তারিখ দিতে পারব না। তার আগ পর্যন্ত তাই নিশানের চর্চা জনগণতান্ত্রিক বিপ−বের অন্যতম করণীয়। এইখানে বইলা রাখি, ‘গণতন্ত্র’ বইলা আমরা যে জিনিস সমাজে/জগতে দেখি, শুনি, তা সমাজ-শাসনের পদ্ধতি হিসাবে, আদর্শ হিসেবে, সংস্কৃতি হিসেবে চইলা আসতেছে। এর নানা রকমফের-তরিকা আছে। যেমন পশ্চিমা ধাঁচের ‘গণতন্ত্র’। এর বয়স পুঁজিবাদের সমান। মৃত্যুও পুঁজিতন্ত্রের সাথেই। বিকশিত/উদার পুঁজিবাদ প্রাইভেট খায়েশের/ইচ্ছার/অনুভূতির/মূল্যবোধের পাবলিক ভোগ ততখানিই অনুমোদন করে, যতক্ষণ তা উদারনৈতিকতার ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ না করে। এর ব্যাত্যয় ঘটলে সে, যেমন, ‘হিজাব’বিরোধী আইন করতে পিছপা হয় না। পুঁজিবাদ তা র জ্বালানী সংগ্রহ করে নিজ ও পররাষ্ট্র জনগণকে শোষণ করে। আমরা যারা পুঁজিতন্ত্রের ফাঁপড় ও দাবড়ানি চাই না, তারা সমাজ-ব্যবস্থা চালাইতে একটা অংশগ্রহণমূলক, অর্ন্তভূক্তিমূলক, সংহতি ও সহযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা, ব্যক্তিমালিকানার দাপটহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চাই গণতন্ত্রের নামে যদি ব্যক্তি ও সিন্ডিকেট শাসন চলে, তবে তার বিনাশ করার মাধ্যমে সেটার সম্ভাবনা তৈরী হয়। তার বহু নাম হইতে পারে। যেমন, জনগণতন্ত্র। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশে এখনও প্রতিষ্ঠা পায় নাই।

যেই সব নীতি, চর্চা, প্রতিষ্ঠান, আদর্শ আমি মানি না, তার চিহ্ন আমি স্বেচ্ছায় বহন করব না জোর করলে তা প্রতিরোধ করব। সেই ব্যবস্থার চর্চা আমি করব না। ‘নিজের’টা, ‘নিজে’র মত করব, যতখানি, যেভাবে পারি। যে বা যারা জনগণতান্ত্রিক বিপ −ব চায়, সে বা তারা এইটা করবে। এর নাম জীবনধারা, জীবনচর্চা। লাইফস্টাইল। খাওয়া, পড়া, বসত-বাড়ি, প্রেম-ভালবাসা, সমাজ-সংগঠন…সব। অধিপতি শ্রেণী/মতাদর্শ ও তার পোষ্যরা যেখান থেকে যে লাইফস্টাইল নিক না কেন, নিজে যেটাই ভোগ করুক না কেন, সে চায় অন্যপক্ষকে কোনো এক বা একাধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। শাসন করতে। পণ্যপুঁজিবাদ নাম নিশানা-চিহ্ন-প্রতীক দিয়াই তো পাবলিকরে খাওয়াইয়া পরায়া কাম সারতেছে। বাসনা যন্ত্র, পুঁজি ও মুনাফা যন্ত্র চালু রাখতেছে। রাষ্ট্র, আধিপত্যমূলক সমাজ-শাসন এবং ‘বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল’ নিজের সুবিধামতো লাইফস্টাইল চায়, মানুষকে সে অনুযায়ী চলতে বাধ্য করার চেষ্টা করে, নানা কায়দায় তাকে ‘উপভোগ্য’, ‘লোভনীয়’ করে তুলতে কসুর করে না লাইফস্টাইল তাই রাজনীতি। লাইফস্টাইল যার যা তার সেই রাজনীতি। যিনি যে লাইফস্টাইলের পক্ষে, তার সেই রাজনীতি।

আমি যদি পুঁজিতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র, নির্বিকার ভোগবাদ, নিপীড়ক ক্ষমতাকাঠামো-এইসব জিনিস না চাই, আমি যদি ‘উপনিবেশ’, ‘আধুনিকতা’র কোনো আছর নিজের মাথা এবং সমাজ থিকা ফেইলা দিতে চাই, তবে আমি ঘর-গেরস্থালী, সমাজ-জামাত-পাবলিক জগত, সম্ভব সব রকম ‘ফ্রন্টে’ তার বিরূদ্ধে লড়ব। শরীর সেই লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট এটা গোপন-প্রকাশের ধারণা পাল্টায়া দেয়। সদর-অন্দর পাল্টায়া দেয়। ক্ষমতার বিন্যাস পাল্টায়া দেয়। কাজটা হইতে পারে সমালোচনা, পর্যালোচনা ও বিশে−ষণ, বিদ্রূপ ও উন্মোচন, সম্মুখসমর, মাথা-শরীর ও সমাজে স্বাধীন অঞ্চল/মুক্তাঞ্চল গঠন, এর পরিধি বাড়ানো। কিভাবে, কখন, কোন মাত্রায়-সেটা বিবেচনা। কোনটা কাজ না? যারা, ধরা যাক, ‘ভবিষ্যত’, ‘মুক্তি’ ইত্যাদিতে আস্থা রাখেন না, বর্তমানে, নগ দে চান, তাদের জন্য তো এই লড়াই আরো জরুরী!

চিন্তা এবং চিন্তার পদ্ধতি না বদলায়া শুধু পোশাক বদলায়া লাভ নাই। আবার চিন্তা বদলায় বইলাই পোশাক বদলায়। পোশাক বদলায় বইলা চিন্তা বদলায় না। বড়লোক তার সুবিধা ও সংকট থিকা যা খায়-পড়ে তা অ-বড়লোকের জন্য ফ্যাশন। বড়লোকের সেট করা ফ্যাশন উচ্চ মধ্যবিত্ত অনুকরণ করে। মধ্যবিত্তও চেষ্টা করে। এইটা কোন পরিবর্তন না।

লুঙ্গি-শাড়ী-স্যুট-সাফারি জাতীয়তাবাদের আলু-মুলা না। জাতীয়তাবাদ নিজেরটা পাওয়া হয়া গেলে অন্যের ওপর আগ্রাসন চালাবে না তার গ্যারান্টি নাই। লাইফস্টাইল জনগণতন্ত্রায়নের সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা, স্বায়ত্বশাসন ও সংহতির সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতা, স্বায়ত্বশাসন ও সংহতির জন্য চাই লাইফস্টাইলের জনগণতন্ত্রায়ন। ‘জাতীয়তাবাদী’, ‘দেশপ্রেমিক’, ‘জনগণের পক্ষের’ দাবীদার যে কারো মৌলিক করণীয়ের মধ্যে পরে জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল ও সমাজ সংগঠন ও ব্যবস্থাকে সমর্থন করা। না পারা টা তাদের স্ববিরোধের প্রকাশ।

Eida gelo ek dik. Poshaker aro sthan-kal-patro bhed thakbe(jemon thandar deshe gele ami ki korbo?). Kintu tar che boro kotha amar pratyahik jibon o shomaj. Poshaker protibesh-rajnitir (political ecology) dik ase. sei alochonao dorkar…

…shobar jonno lungi pora joruri na. abosshok o na. amio je sharajibon, shobshomoy lungi porbo-emon protigya kori nai. karon, bishoyta lora i korar. Onushiloner maddhome tar protik o koushal nirdharoner. jara amar ei `cultural monopoly’ bhangte chan, tara swagoto!

প্রশ্ন হয় : লাইফ-স্টাইল কতদুর যায়? পুঁজিবাদ তো ‘বিপ্লবী’ লাইফস্টাইলকে পণ্য বানাবে আর সমাজের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন তো টি-শার্ট পড়ার মত ‘সহজ’ কর্ম নয়। উত্তর : পুঁজিবাদ ‘বিপ্লবী’ লাইফস্টাইল পুরোটা নিতেও পারে না। চায় ও না। আর ‘বিপ−বী’ লাইফস্টাইল কোনো খাপে মোড়া জিনিস না। লাইফ-স্টাইল/জীবনধারা শুধু লুঙ্গি-শাড়ী চুড়ির মামলা না। এইটা জীবন-সমাজ-জগত সম্পর্কে ভাবনা ও অনুশীলনের মামলা। এতে তাই বিপ −বী সৃজনশীলতা, সতর্কতা ও কৌশলের ব্যাপার আছে। ‘বিপ−ব’ টিশার্ট ফতুয়া পড়ার মত সহজ কর্ম না। ঠিকই তো।

জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল ‘উদার/ বুর্জুয়া ‘ পরিবেশে আরামছে করার কোনো ব্যাপার না। এটা একটা লড়াই। এটা মুক্তবাসনার অনুশীলন। কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক বাসনা পূরণ না সমাজের স্ববিরোধের প্রকাশ শুধু না। জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল বুর্জোয়া ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ না। জনগণতান্ত্রিক আচার-অনুশীলন। ‘ব্যক্তি’-‘ব্যক্তি’, ব্যক্তি-সমাজ, ব্যক্তি-সংগঠন, ব্যক্তি-উপায় /উপকরণের এমন সম্পর্ক, উৎপাদন, বন্টন ও ভোগের এমন ধরন চর্চা (লাইফ-স্টাইল), যা ঘরে-বাইরে, সমাজে অ-ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সম্ভব করে তোলে। যা ব্যক্তি ও সমষ্টির সুরক্ষা ও বিকাশ নিশ্চিত করে। এর জন্য দরকার একটা পারষ্পারিক বোঝাপড়ার মধ্যদিয়ে চর্চিত সামষ্টিক প্রক্রিয়া ও উদ্যোগ।

কিন্তু কর্তা কে? যে বা যারা সিদ্ধান্ত নিয়া একটা কাজ করে; ঘটনায় তার অংশগ্রহণ এমন যে তা ঘর-বাহিরের সীমানায় ধাক্কা দেয়। নাড়ায়ে দেয়। সরায়া ফালায়। ভাইঙ্গা দেয়। কায়েমি স্বার্থের আরাম হারাম করে। ঘটনা এবং অবস্থা ও ব্যবস্থার নতুন বিধি-বিধান তৈরী করে। তখন রাজনীতি বদলায়। প্রেম বদলায়। বিজ্ঞান বদলায়। শিল্প বদলায়। সংস্কৃতি বদলায়। সমাজ বদলায়। এ সবের মধ্য দিয়া সত্য প্রকাশিত হইতে থাকেন। এই পথ, এই প্রক্রিয়া, এই যাপন, এই সম্পর্ক বিকাশ কোনো পুতুপুতু চর্চা নয়। বিপ্লবী ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাজ ও সংস্কৃতির, ইতিহাস ও বর্তমানের রক্তক্ষরনেই তা সম্ভব হয়।

৪.
রঙের পরলাম। ‘নিরঙ্গা’ও পরলাম। পার দে ওয়া, পার ছাড়া, নকশা করা…নানা রকম। লুঙ্গির সাথে ওড়না, ফতুয়া, এইসব নিয়াও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমি করছি। কিন্তু মামলাটা আমার কাছে শুধু তিনটুকরা কাপড়ের না। এবং আমি শুধু তিনটা কাপড় পড়ি নাই। পায়ে আলতা-নুপুর শুধু পরি নাই। কপালে ফোঁটা শুধু পড়ি নাই। চুলের খোঁপা আর বেনী শুধু বান্ধি নাই। কানে ফুল শুধু পড়ি নাই।’দৈনন্দিন’, ‘সামাজিক’, ‘রাজনৈতিক’, ‘সাংস্কৃতিক’ কাজকর্ম করছি। এই সবের ভিতর দিয়া, মোটা-দাগে আমাদের সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী, লিঙ্গ ও পেশায় নানারকম যোগাযোগে ও মিশামিশিতে ‘নিজ ‘ এবং ‘অন্যে’র ঘর-বাহির, পাবলিক-প্রাইভেট চর্চা, সৌন্দর্য-চেতনার দশা কিংবা চালশা, লিঙ্গচেতনা, নারী-পুরূষ চেতনা, বন্ধুত্ব,প্রেম,যৌনতা,খাওয়া-পরা, সমাজ-সংস্থার আশা-আকাঙ্খা বোঝার চেষ্টা করছি। অনেকে আরো অন্যকোনো ভাবে করেন।…

দেখলাম- আমরা, ‘সবচে’ ‘বিপ্লবী আকাঙ্খাসম্পন্ন’ কর্র্মীরাও যেন ‘বিপ্লবের’ ভয়ে ভীত। এই ভয় আরেক ‘নিজ’ কে দেখার ভয়। ‘মুক্তির’, ‘আনন্দের’ ‘স্বাধীনতার’ ‘নতুনে’র, ‘আজব কিছু’র স্বাদ-অভিজ্ঞতা কে ভয়। তাই আমরা অনেকে শ্রেনীসম্পর্ক-নারী-পুরূষ-সৌন্দর্য যৌনতা -প্রেম-বন্ধুত্ব ইত্যদি প্রশ্নে দারূন রক্ষনশীল, কায়েমীস্বার্থবাদী (প্রতিক্রিয়া শীল, কার্যত বর্নাশ্রমপন্থী, ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট আরশীয় অবজেকটিভ দৃষ্টিভঙ্গীওয়ালা’দের কথা না হয় নাই বললাম)। ‘বিপ্লব’কে, ‘মৌলিক পরিবর্তন”কে তাই অনেকে ভবিষ্যতের ঘটনা হিসেবে রাখতে চাই, ‘ঐতিহাসিক’ঘটনা হিসেবে চাই, প্রক্রিয়া হিসেবে চাই না। বর্তমানের যাপন হিসেবে চাই না। যেটুক চাই অনেকে, তা অনেক ক্ষেত্রে নগদার্থনীতি সম্ভব হয়ে ওঠে বলে। ফলে ‘বিপ্লব’ ‘অসম্ভব’ “অধরা” থেকে যায়। অথবা ‘ঐতিহাসিক’ কিছু একটা হওয়ার পর কেউ কেউ বলে ওঠে ‘এইটাই বিপ্লব’, এইটাই অমুকতন্ত্র! এবং তার নামে শুরু হয় অমুকবাদ (ফ্যাসিবাদ) জিন্দাবাদ!…কিন্তু বিপ্লব হইল বিপ্লবী সমাজ জীবনের অনুশীলন। অনুমান না। বর্তমান সাধনা। পরিবর্তনের অনুশীলনে: পাবি রে অমূল্য নিধি বর্তমানে। অগ্রাধিকার থাকতে পারে। কিন্তু কোনটা বাদ দিয়া না।

“অধর” যদি বিপ্লব, তবে তাকে অধর দিয়ে ধরো। জনগণতান্ত্রিক লাইফস্টাইল আর জনগণতান্ত্রিক সমাজ/সংগঠন সেই অধর ধরার অধর ফাঁদ। অধর, কারন আগে থেকে তৈরী থাকে না। প্রতিনিয়ত লড়াই/অনুশীলনের মাধ্যমে একে চিনে নিতে হয়, সৃষ্টি করতে হয়। ফাঁদ পাততে জানলে তিনি আনন্দ হয়ে ধরা দেন।

আলেক সাঁই।।


অরূপ রাহী । । ২০০৭


site design, development and maintain by jakaria hossain. for any inquary contact: c.jakariahossain@gmail.com