যা ঘটতেছে তা কি কি অর্থে আতংকিত হবার মত, ‘প্যানিক’ করার মত? ‘প্যানিক’ করার বস্তগত/ কাঠামোগত কারনগুলা কি? কারা কারা কীভাবে এই আতংকের কি কি ভাবে ভুক্তভোগী ? কোন ধরণের তথ্য এবং পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনা ‘প্যানিক’ ছড়ায়, কোন ধরণের তথ্য- পরিসঙ্খ্যান চর্চা ‘প্যানিক’ থেকে সমাজকে বাঁচায় ? রাষ্ট্র, পুঁজিবাদ, তথ্যশিল্প, জ্ঞানবানিজ্য, পরিচয়ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ – এসব সেখানে কীভাবে ভূমিকা রাখতেছে? এটা তো ঠিক, করোনায় সব দেশে সব সমাজে কম-বেশি আতংক , উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা , ভয়, কাজ করতেছে । উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা , ভয় সৃষ্টি বা নিয়ন্ত্রণ যেমন রাজনৈতিক হওয়া সম্ভব, তেমনি, এসব ‘রোগ’ মহামারি, শোক, উদ্বেগ থেকে মুক্তির জন্যে ন্যায়-ইনসাফি জীবন- সমাজ নির্মানের আলাপ থাকা- না থাকা- করা-না-করা- চাপা দেয়া- জরুরী মনে না করা- সবই রাজনৈতিক। ‘ইনফরমেশন এইজ’-এ জুলুমশাহীর প্রধানতম কাজের একটা, ক্ষেত্র বিশেষে প্রধানতম কাজ ‘তথ্য ব্যবস্থাপনা’। জীবন – মৃত্যুর। শরীর-মনের। ‘স্বাস্থ্য’, ‘রোগ’ ও ‘চিকিৎসার’। প্রাণ-প্রক্রিয়ার। সকল জুলুমশাহীতে বায়োপলিটিক্স বা জৈবনিক রাজনীতির বড় দিক এই তথ্য ও জ্ঞান ব্যবস্থাপনা এবং নজরদারী। করোনা ঘটনাবলী এসবের বাইরে নাই। তাই এই ঘটনাবলী বুঝতে ‘তথ্য’, ‘তথ্য ব্যবস্থাপনা’, ‘বিশ্লেষণ ‘ ‘জ্ঞান’ এবং ‘পদ্ধতি’র রাজনীতি, বিশেষত এসবের পশ্চিমা ঔপনিবেশিক- বর্ণবাদী- পুরুষতান্ত্রিক-পুজিবাদী বিকাশের ইতিহাস, বর্তমান দুনিয়ার প্রভাবশালী ‘ সেক্যুলার’ এবং ‘এন্টি সেক্যুলার’ সব রকম ‘আধুনিকতাবাদী’ কান্ডজ্ঞান এবং বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের উপর এই বিকাশের প্রভাব- এসব বিবেচনায় রাখা দরকার। সেটা এই পোষ্টে বিস্তার করার সুযোগ নাই। যেটা সহজেই লক্ষ্যনীয়, তা হইলো, করোনা/মহামারি নিয়া বাংলাদেশ/দুনিইয়ায় এখন পর্যন্ত যেসব যেসব আলাপ/ বিশ্লেষণ বেশি সামনে আছে এবং সেগুলা যেসব মডেল- এর উপর ভিত্তি করা- সবই এত মডার্নিষ্ট এবং পুঁজিবাদী কান্ডজ্ঞান এবং ‘বিশেষজ্ঞ’ জ্ঞানের , যে, সেগুলা দ্রুতই বিভিন্ন বাইনারীতে গিয়া ঠেকে বা সেওব জ্ঞান দিয়া আলাপ- বিতর্ক বাইনারীতে পৌছায় এবং সে অনুসারে সমাধানের বর্ণবাদী, পুরুষতান্ত্রিক, রাষ্টবাদী, ফ্যাসিস্ট( পুঁজিবাদী, ‘ট্র্যাডিশনালিস্ট’ / পরিচয়বাদী আধুনিক এন্টি সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী, উন্নয়নবাদী ) কল্পনা শুরু করে, সেরকম উপায় অনুশীলন শুরু করে। দেখা যাইতেছে এসবের উদাহরণ। নজরদারী বাড়ানো, জাতি-ধর্ম পরিচয়বাদী পুলিশি ব্যবস্থা বাড়ানো , বর্ণবাদী স্বাস্থ্য ভাবনা/ অনুশীলন/ ব্যবস্থা ইত্যাদি করার আলাপ আসতেছে ‘মুলধারা’তেই। ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ । ‘করোনা’র ‘বিরুদ্ধে’ ‘যুদ্ধ’? এসবের বাইরে , সাম্য, ইনসাফ আর মর্যাদার ভিত্তিতে মহামারীসহ বৈশ্বিক সমস্যাগুলার সমাধানের আলাপ একেবারে নাই- তা তো না। অল্প হইলেও আছে। কিন্তু ‘মুলধারা’তে ‘অনুপস্থিত’। আমরা যদি আসলেই এরকম ‘রোগ’ মহামারি, বিনাচিকিতসায় মৃত্যু , অনাহার, বাসস্থানহীনতা, পুরুষতান্ত্রিক জুলুম, ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ সংকট, চিন্তা ও মত প্রকাশের বাধা, জলবায়ু পরিবর্তন/ উষ্ণায়ন, খাদ্য দুষন, পরিবেশ দুষনসহ দুনিয়ার বর্তমান সমস্যাগুলি থিকা মুক্তি পাইতে চাই, তাইলে ঐসব ফ্যাসিস্ট/ জুলুমুকারী সমাধানের রাস্তা কল্পনা বাদ দেয়া দরকার। যেসব পদ্ধতি ও মডেলে ঘটনার ব্যাখ্যা কইরা এসব জুলুমুকারী সমাধানে আমরা পৌছাই- সেগুলাকে প্রশ্ন করা দরকার। জরুরী ভিত্তিতে সমাজে ‘তথ্য’র ‘ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘বিশ্লেষণে’র এবং সমাধান বিকল্পের বহুমাত্রিক, বহুমাধ্যমের, বহুধরণের , বিউপনিবেশিত গণতান্ত্রিক চর্চা-অনুশীলন দরকার। করোনা ঘটনায় সেটা ভাবার চেষ্টা করতে পারি।